
প্রায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জনগণের মতামত। বিহারের মানুষ RJD তথা তেজস্বী যাদবকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। মহাগঠবন্ধন বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৪৬ আসনে এগিয়ে। যেখানে NDA এগিয়ে গিয়েছে ১৯২ আসনে। এতে পরিষ্কার, বিহারবাসী বিরোধী জোটকে কার্যত পরিত্যাগ করেছে। যে দল এবং যে নেতা ভোটের দিন পর্যন্ত টক্কর দিচ্ছিলেন শাসকদলকে, জয়ের দাবিও করেছিলেন, তিনি এভাবে ধরাশয়ী হলেন কীভাবে? এই মুখ থুবড়ে পড়ার কারণগুলি কী কী?
যাদব প্রার্থীদের টিকিট
এই পরাজয়ের একটি মূল কারণ RJD-র ৫২ জন যাদব প্রার্থী দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এটি তাদের জাতিবাদী প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট করেছে। পাশাপাশি অ-যাদব ব্যাঙ্কের ভোট কমিয়েছে। বিহারের রাজনীতি অনেকাংশেই জাতিবাদের উপর নির্ভর করে। যেখানে যাদব (১৪%) RJD-র অন্যতম বড় ভোটব্যাঙ্ক। তবে ৫২ জন যাদব প্রার্থীকে টিকিট দেওয়ায় মানুষ যাদব রাজের গন্ধ পেয়েছে। এর জেরে ভিন জাতির মানুষরা প্রায় অধিকাংশই তেজস্বীদের উপর আর ভরসা রাখেনি।
RJD ১৪৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। যার মধ্যে ৫২ জন যাদব প্রার্থী ছিল। যা প্রায় ৩৬%। এই পরিসংখ্যান ২০২০ সালের ৪০ জনের থেকেও বেশি। এটি তেজস্বীর 'যাদব একত্রিকরণ' রণনীতির অংশ। BJP তাদের প্রচারে এই 'যাদব রাজনীতি'-র প্রসঙ্গে উত্থাপন করেছিল। শহুরে এবং মধ্যবিত্ত ভোটারদের মধ্যে যা ছাপ ফেলেছে। তেজস্বী যদি ৩০-৩৫ জন যাদবকে টিকিট দিতেন এবং সংখ্যা সীমাবদ্ধ রাখতেন তবে কুর্মী-কোহরি ভোটের ১০-১৫% বাড়তে পারত। যেরকমটা ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সময়ে করেছিলেন অখিলেশ যাদব। তিনি কেবলমাত্র ৫ যাদব প্রতিনিধি দাঁড় করিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশে।
সহযোগী দলগুলিকে প্রাধান্য
সহযোগী কংগ্রেস এবং বাম দলগুলিকে সঠিক প্রাধান্য দিতে পারেনি তেজস্বী যাদব, এমনটাও মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সিট ভাগাভাগির সময়ে একাধিকবার দ্বন্দ্ব মহাগঠবন্ধনকে দুর্বল করেছে। তেজস্বীর RJD কেন্দ্রীক প্রচার শাসকদলের ভোট বাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। NDA একজোট ছিল, মহাগঠবন্ধন নয়, তেজস্বীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এমনটাই প্রমাণ করেছে।
কংগ্রেস 'গ্যারান্টি' ইস্তেহারে জোর দিয়েছিল তবে তেজস্বী কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা নিয়ে বেশি প্রচার করেছিলেন। যা সহযোগিতার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেনি। শুধু তাই নয়, তেজস্বী মহাগঠবন্ধনের ঘোষণাপত্রের নাম তেজস্বী প্রণ রেখেছিলেন। তেজস্বী প্রচারপর্বে সহযোগী দলগুলিকে ব্যাকফুটে রাখেন বলেও মত একাংশের। ব়্যালিতে রাহুল গান্ধীর থেকে তেজস্বীর ছবি বেশি নজরে পড়েছে।
ব্লু প্রিন্ট সম্পর্কে অবগত নন
বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, তেজস্বী যাদব অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কোনও ব্লু প্রিন্ট দেখাতে পারেননি। প্রতি ঘরে সরকারি চাকরি, পেনশন, মহিলা স্বনির্ভরতা এবং মদ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিগুলির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থের ফান্ডিং, যোজনাগুলির বাস্তবায়ন বা সময়োপযুক্ত ব্লু প্রিন্টের অভাব। এতে ভোটারদের মধ্যে অবিশ্বাস বেড়েছে। প্রতিদিনই বলতেন আগামী ২ দিনের মধ্যে ব্লু প্রিন্ট দেবেন কিন্তু তা বাস্তবে দেখাতে পারেননি।
মুসলিমদের প্রাধান্য দেওয়া
মহাগঠবন্ধনের মুসলিমপ্রীতিও পরাজয়ের নেপথ্যে একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। মুসলিম অধ্যুষিত আসনে মহাগঠবন্ধের সহযোগীদের জয় সম্ভব হলেও তা গোটা বিহারের ক্ষেত্রে নেচিবাচক প্রমাণিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মুসলিমপ্রীতির জন্য যাদব ভোটও হাতছাড়া হয়েছে তেজস্বীর। ক্ষমতায় আসলে ওয়াকফ বিল লাগু না করার প্রতিশ্রুতিও তেজস্বী দলের ক্ষেত্রে বুমেরাং হল। BJP লালুপ্রসাদ যাদবের সংসদ এলাকায় ওয়াকফ বিল নিয়ে একাধিক প্রচার চালিয়েছিল। যার ফায়দা ঘরে তুলেছে গেরুয়া শিবির।
লালুপ্রসাদকে নিয়ে বিভ্রান্তি
তেজস্বী লালুপ্রসাদের পরম্পরা বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই তবে পোস্টারে বাবার ছবি অনেকটাই ছোট করে দেখানো হয়েছিল। ফলে মুখে এক আর মনে এক হয়ে গিয়েছিল বিহারবাসীর সামনে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোপালগঞ্জের ব়্যালিতে বলেন, 'পোস্টারে লালুকে কোনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এটা তাঁর অপমান।'