
চার বছরের মধ্যে প্রথম ভারত সফরে যখন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। গোটা আয়োজনই রাজকীয়। লাল গালিচা সংবর্ধনা, প্রোটোকল ভেঙে টারম্যাকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন, দৃঢ় করমর্দন থেকে উষ্ণ আলিঙ্গন। দু’দেশের সম্পর্কের উষ্ণতা স্পষ্ট ছিল প্রতিটি দৃশ্যে। দুই নেতা একই গাড়িতে করে নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে একান্ত নৈশভোজেও যান।
কিন্তু সবচেয়ে নজর কাড়ে একটি বিষয়, মোদী তাঁর প্রচলিত রেঞ্জ রোভার নয়, বরং সাদা টয়োটা ফরচুনার বেছে নেন পুতিনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ইচ্ছাকৃত বার্তা, নাকি ব্যবহারিক প্রয়োজন?
যদিও সরকারিভাবে কোনও কারণ জানানো হয়নি, ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত মোটেই হঠকারী নয়। যুক্তরাজ্য ও জার্মানি, দুই দেশই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অথচ মোদীর সরকারি বহরে রয়েছে যুক্তরাজ্যে তৈরি রেঞ্জ রোভার এবং জার্মান মার্সিডিজ-মেবাখ।
এমন পরিস্থিতিতে পুতিনকে ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের গাড়িতে তোলা রাজনৈতিকভাবে ‘অস্বস্তিকর’ হতে পারত। তাই জাপানি ব্র্যান্ড টয়োটার ফরচুনার বেছে নেওয়াকে অনেকেই দেখছেন পশ্চিমাদের উদ্দেশে এক প্রতীকী বার্তা হিসেবে, 'আমরা নির্ভরশীল নই।'
এই তত্ত্বকে আরও জোরদার করেছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পদক্ষেপ। তিনিও তাঁর রাশিয়ান সমকক্ষ আন্দ্রেই বেলোসভের সঙ্গে জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে পৌঁছতে সাদা ফরচুনারই ব্যবহার করেন।
আসলে কি শুধুই বসার জায়গার কারণে?
সূত্রের একাংশ আবার বলছেন, সিদ্ধান্তটি ছিল পুরোপুরি বাস্তবিক। প্রধানমন্ত্রীর রেঞ্জ রোভারে তৃতীয় সারির আসন নেই, ফলে দোভাষীসহ দুই নেতার একসঙ্গে বসার সুযোগ ছিল না।
অন্যদিকে টয়োটা ফরচুনারে রয়েছে অতিরিক্ত আসনের সারি। জানা গেছে, মোদী ও পুতিন ওঠার আগেই দোভাষীরা গাড়িতে বসেছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনীর অনুমোদনও দ্রুতই মিলেছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফরচুনার কূটনীতি’
অনলাইনে অবশ্য আলোচনা থামেনি। কেউ বলছেন, 'পশ্চিমাদের জন্য স্পষ্ট বার্তা।' বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা টুইট করেন, 'বুদ্ধিমান লোকেরা জানেন কেন ফরচুনার।'
আরও অনেকে মন্তব্য করেছেন, ইউরোপীয় ব্র্যান্ড এড়িয়ে টয়োটা বেছে নেওয়া রাশিয়ার প্রতি পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাকে পরোক্ষভাবে অস্বীকার করার প্রতীকও হতে পারে।