আপন খেয়ালে চলা সহজিয়া ধরণের শিল্পী। অসমের সকলেই একথা বলেন। অসমের বাইরের মানুষও মুগ্ধ তাঁর গায়কিতে। বাংলাতে প্রচুর হিট প্লেব্যাক তাঁর। বিহু হোক, বা কোনও বলিউড ছবি। জুবিনের সব হিট! হামিংয়ের জন্য বিখ্যাত এই গায়কের গলায় নাকি চাপা হাহাকার রয়েছে, সঙ্গীত পরিচালকরা জানিয়েছেন একথা।
জুবিন গর্গের অকাল প্রয়াণে গোটা অসম শোকাচ্ছন্ন। আর তারমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে তাঁরই লেখা ও গাওয়া একটি গান। ‘মায়াবিনী রাতির বুকুত... দেখা পলু তুমার সাবি...।'
আজ, মঙ্গলবার শেষকৃত্য হবে জুবিন বড়ঠাকুরের (আসল নাম, গর্গ গোত্র নাম)। রবিবার গুয়াহাটির অর্জুন ভোগেশ্বর বরুয়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তাঁর মরদেহ আনা হয়। ভিড় জমিয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন ধর্মের। বিভিন্ন পেশার। শেষ শ্রদ্ধা জানান সকলেই। পুলিশকর্মীদের চোখেও ছিল জল।
ইতিমধ্যেই জুবিন গর্গের প্রিয় গান 'মায়াবিনী রাতির বুকুত' গোটা অসমের শোক-সঙ্গীত হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালে একটি কনসার্টে জুবিন নিজেই বলেছিলেন, 'এই গানটা আমার ফ্যান্টাসি। যখন আমি মারা যাব, তখন এই গানটাই বাজবে। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী, রাজ্যজুড়ে এই গান বারবার বাজানো হয়েছে। সমবেতভাবে গাওয়া হয়েছে প্রায় গোটা অসমজুড়ে।
গায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুধু অসম নয়, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, পুনে ও অন্যান্য শহর থেকেও ভক্তরা জড়ো হয়েছেন। মায়াবিনী গানের সুরে কাঁদছেন অনেকে। জুবিন যেন তাঁদের পরিবারেরই একজন। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্য ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ভক্তরা তাঁর বাড়ির বাইরে, গাড়ি বা রাস্তাঘাটে এই গান গেয়ে শোকপালন করেছেন। গোটা রাজ্য ছেয়েছে তাঁর পোস্টার আর ছবিতে।
জুবিন গর্গ অসমিয়া পপ সংস্কৃতি ও বিহু সংস্কৃতির অন্যতম আইকন। তাঁর গান, আবেগ ও সমাজসেবামূলক কাজ তাঁকে সাধারণ গায়ক ও শিল্পীর চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। মায়াবিনী রাতির বুকুত আজ তাঁর প্রতি অসমের মানুষের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে আছে। যা ভবিষ্যতেও স্মৃতির পাতায় অমর থাকবে বলে মনে করেন সেরাজ্যের নতুন প্রজন্ম।
অসমিয়া ভাষায় গাওয়া গানটির বাংলায় অনুবাদ নীচে দেওয়া হল—
মায়াবিনী আমার চোখে (Mayabini Ratir Bukut)
মায়াবিনী আমার চোখে
চেয়ে দেখো, দেখো না চেয়ে,
ভাঙা মনে আমারও আছে কত আশা।
ভেবো না আর বাঁধন তোমার,
খুলে দিলাম আকাশ নীলে,
ডানা মেলে দিও তোমার,
ডাকে তোমায় নতুন জীবন।
স্মৃতিগুলি কখনও
যদি মনে পড়ে যায়,
পারবে কি ভুলতে
তুমি তখনও আমায়?
ভোলা কি যায় গো
সেই প্রথম প্রেমের রঙিন ছোঁয়া।
রাতে চাঁদেরই জ্যোৎস্না হয়ে
আলো দিয়ে যাব তোমার ঘরে,
হাসনুহানা ফুলের সুবাস
হয়ে ছড়িয়ে যাব অন্তরে।
স্মৃতিগুলি কখনও
যদি মনে পড়ে যায়,
পারবে কি ভুলতে
তুমি তখনও আমায়?
ভোলা কি যায় গো
সেই প্রথম প্রেমের রঙিন ছোঁয়া।
মায়াবিনী আমার চোখে
চেয়ে দেখো, দেখো না চেয়ে,
ভাঙা মনে আমারও আছে কত আশা।
ভেবো না আর বাঁধন তোমার,
খুলে দিলাম আকাশ নীলে,
ডানা মেলে দিও তোমার,
ডাকে তোমায় নতুন জীবন...