বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। আর তার মধ্যে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল জামাইষষ্ঠী। জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় শাশুড়ি মায়েরা এই ব্রত পালন করেন মূলত। জামাইষষ্ঠীর উৎসবকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে বাঙালি বাড়িতে পালন হয়ে আসছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। সকাল থেকে উপবাস করে নানা নিয়মের মাধ্যমে এই ব্রত পালন করেন শাশুড়িরা।
তবে অরণ্যষষ্ঠী করুন বা জামাইষষ্ঠী। পুজোয় যেন এই কটি জিনিস বাদ না পড়ে। অরণ্য ষষ্ঠীতে যে উপকরণ গুলি প্রয়োজন হয় তা হল তাল পাতার পাখা, দুর্বা, ধান, মিষ্টি, সুপারি, করম চা যা পুজোতে বিশেষ ভাবে প্রয়োজন, ফুল, বেলপাতা, আম পল্লব, হলুদ দিয়ে রাঙানো সুতো ইত্যাদি।
এই প্রত্যেকটি উপকরণেরই কিন্তু বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। ফুল বেলপাতা আর হলুদ দিয়ে রাঙানো সুতো যখন শাশুড়িরা তাদের জামাইয়ের হাতে বেঁধে দেয়, তখন মনে মনে প্রার্থনা করে তোমার পরিবারের সঙ্গে যাতে আমার পরিবারের বন্ধন অটুট থাকে, আমার মেয়ের সঙ্গে যেন তোমার সম্পর্কর বন্ধন চিরকাল ভালোবাসার বাঁধনে আবদ্ধ থাকে। পাখা দিয়ে জামাইকে হাওয়া করার অর্থ হলো আপদ বিপদ যেন তার থেকে দূরে থাকে। তিনবার ষাট ষাট ষাট বলে পাখার বাতাস করা হয়। এই তিনবার ষাট ষাট ষাট বলার অর্থ হল তার দীর্ঘায়ু কামনা করা। ধান হলো সুখ-সমৃদ্ধির ও বহু সন্তানের প্রতীক। দূর্বা চিরসবুজ ও চির সতেজতার প্রতীক। মেয়ে যাতে শ্বশুরবাড়িতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে তাই এই রীতিনীতি পালন করা হয়। তার সঙ্গে থাকে মা ষষ্ঠীর কাছে মেয়ের জন্য সন্তান কামনার প্রার্থনা।
এইদিন পুজোর ডালিতে কাঁঠাল পাতার উপর পাঁচ সাত বা নয় রকমের ফল রাখা হয়। তার মধ্যে একটি ফল হতেই হবে করমচা। আর থাকে ১০৮ গাছা দূর্বা। ষষ্ঠী পুজো উপলক্ষে শাশুড়িরা স্নান করে ঘটে জল ভরে ঘটের উপর স্থাপন করেন আম পল্লব। তার সঙ্গে রাখেন তাল পাতার পাখা। ১০৮ টি দূর্বা দিয়ে বাঁধা আটি দিয়ে পুজোর উপকরণ সাজানো হয়। করমচা সহ ৫ অথবা ৭ থেকে ৯ রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার উপর সাজিয়ে রাখতে হয় শাশুড়িকে। তারপর সুতো হলুদে রাঙিয়ে তাতে ফুল বেল পাতা দিয়ে গিট বেঁধে দেওয়া হয় । এরপর মা ষষ্ঠীর পুজো করা হয়। বাড়ির কাছে মা ষষ্ঠীর থান থাকলে সেখানে গিয়ে শাশুড়িরা এই পুজো দিয়ে আসেন। তারপর ব্রতকথা পাঠ করে পাখার বাতাস দিয়ে সন্তান ও জামাইকে বাতাস করে সকলের হাতে মা ষষ্ঠীর সুতো বেঁধে উপবাস ভঙ্গ করেন শাশুড়িরা। ঘটের জলে ভেজানো তাল পাতার পাখার বাতাস করা হয়। যাতে সমস্ত আপদ বিপদ দূরে যায়।
জামাইষষ্ঠী ২০২৪-র সময়
এ বছর জামাইষষ্ঠী পড়েছে আগামী ১২ জুন অর্থাৎ ২৯ জ্যৈষ্ঠ, বুধবার। ১১ জুন সন্ধ্যা ৫/৫৮/৫৭ মিনিট থেকে ১২ জুন রাত ৭/২৪/৫২ মিনিট পর্যন্ত থাকবে ষষ্ঠী তিথি।