বছরের নতুন পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার হাতে পেলেই বাঙালিরা যেই দিনগুলিতে সবার আগে চোখ বোলায়, তার মধ্যে দুর্গা পুজো (Durga Puja) একটি। উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গা পুজো। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে উমা কৈলাশ থেকে মর্তে বাপের বাড়ি এসে দিন পাঁচেক থেকে ফিরে যান শ্বশুর বাড়ি। আর ঘরের মেয়েকে আদরে যত্নে ভরিয়ে, জাকজমকপূর্ণ ভাবে সেই উদযাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি গোটা বিশ্বের বাঙালিরা।
আসাম, ত্রিপুরা, ওড়িশা এবং বিহার রাজ্যেও ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয় দুর্গা পুজো। দেবী দুর্গা, মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়।
আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গা পুজোর উৎসব পালিত হয়। যদিও প্রকৃত অর্থে, উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠি দিন থেকে। যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করা হয় যে, এদিনই দেবী দুর্গা মর্তে এসেছিলেন।
দুর্গা পুজোর পাঁচ দিন মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী হিসেবে পরিচিত। এটি সকলেরই প্রায় জানা। তবে অনেকেই অজানা, প্রতিটি দিনের নিজস্ব অর্থ এবং তাৎপর্য রয়েছে। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষের শুরু হয়। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গা পুজোর সূচনা হয়। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল।
নবরাত্রি ২০২৪
এই বছর ৩ অক্টোবর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে নবরাত্রি। ।
দুর্গা পুজোর তাৎপর্য ও দিনক্ষণ দেখে নিন এক নজরে।
দুর্গা পুজোর প্রথম দিন: ২২ আশ্বিন, ইং ৯ অক্টোবর (বুধবার) মহাষষ্ঠী
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, মহাষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গা তাঁর সন্তান- সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ এবং কার্তিককে নিয়ে মর্তে অবতরণ করেন। মহাষষ্ঠীর প্রাক্কালে দুর্গার বোধনের পর সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়। পুজো প্যান্ডেল,মন্দির, বনেদিবাড়ি এমনকি যেখানে দুর্গার আরাধনা করা হয়, সর্বত্র ঢাকের তালে মেতে ওঠেন সকলে।
* অকাল বোধন
* আমন্ত্রন ও অধিবাস
দুর্গা পুজোর দ্বিতীয় দিন: ২৩ আশ্বিন, ইং ১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) মহাসপ্তমী
মহাসপ্তমীতে মহাপুজো হয়। সূর্য ওঠার আগেই, একটি কলাগাছ পবিত্র গঙ্গার জলে স্নান করিয়ে, তারপর এটিকে নববধূর (কলা বউ) মতো নতুন শাড়ি পরানো হয়।
* নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পুজো প্রশস্তা
* কলাবউ স্নান
দুর্গা পুজোর তৃতীয় দিন: ২৪ আশ্বিন, ইং ১১ অক্টোবর (শুক্রবার) মহাঅষ্টমী
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, বিশ্বাস করা হয় যে দেবী দুর্গা মহাঅষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। এই দিন ভক্তেরা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবীকে আরাধানা করেন। ৯ বছরের কম বয়সী মেয়েরা, এদিন দেবী দুর্গা রূপে পূজিত হন। এই আচারটি 'কুমারী পূজা' নামে পরিচিত। এরপরে, অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে হয় 'সন্ধি পুজো'।
* দুর্গা অষ্টমী
* কুমারী পূজা
* সন্ধি পুজো
দুর্গা পুজোর চতুর্থ দিন: ২৪ আশ্বিন, ইং ১১ অক্টোবর (শুক্রবার) মহানবমী
সন্ধি পূজা শেষ হলে শুরু হয় মহানবমী। নবমীর সন্ধ্যাবেলা, দেবীর মহা আরতি করা হয়।
* মহা নবমী
* দুর্গা বলিদান
* নবমী হোম
দুর্গা পুজোর পঞ্চম দিন: ২৫ আশ্বিন, ইং ১২ অক্টোবর (শনিবার) বিজয়া দশমী
বিজয়া দশমী দুর্গাপুজোর উৎসবের শেষ দিন। প্রতিমাগুলি বরণ করে মহিলারা 'সিঁদুর খেলা'-এ মেতে ওঠেন।
এরপর জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়ার হয় প্রতিমাগুলি। ঘট বিসর্জনের অর্থ, পুজো সমাপ্তি। বিসর্জনের সময় লম্বা শোভাযাত্রা বের করে। যেখানে নাচে- গানে, হাসি মুখে সকলে বিদায় জানান উমাকে।
* বরণ
* সিঁদুর খেলা
* বিসর্জন
* বিজয়া উৎসবের সূচনা