হিন্দুদের বারো মাসে তের পার্বণ (Festival)। এর মধ্যে জন্মাষ্টমী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের (Shri Krishna) জন্ম তিথিতেই দেশ জুড়ে পালিত জন্মাষ্টমী (Janmashtami)। বাসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তান এবং বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণ কংসের কারাগৃহে জন্ম হয়। ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ও রোহিণী নক্ষত্রে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। প্রতি বছর এই তিথিতে কৃষ্ণের ছোটবেলার রূপ, ননীগোপালের পুজো করা হয়। জন্মাষ্টমীর অপর নাম কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী।
জন্মাষ্টমী ২০২৩-র কবে পড়েছে? (Janmashtami 2023 Date)
এবছর ৬ অগাস্ট পড়েছে জন্মাষ্টমী এবং ৭ অগাস্ট নন্দোৎসব। তবে ৬ তারিখ অষ্টমী তিথি রাতের দিকে লাগছে, এজন্যে বেশীরভাগ জায়গায় পুজো হবে ৭ তারিখ।
জন্মাষ্টমী ২০২৩-র অষ্টমী তিথি (Janmashtami 2023 Ashtami Tithi)
৬ অগাস্ট রাত ৮/১০/২৭ থেকে ৭ অগাস্ট রাত ৮/৩/২৩ পর্যন্ত থাকবে অষ্টমী তিথি।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নবদ্বীপ, নদীয়া, মথুরা, বৃন্দাবন সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মহা সমারোহে উৎসব পালন করা হয়। প্রায় একমাস আগে থেকে চলে তার প্রস্তুতি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব নানা ভাবে উদ্যাপন করা হয়। ভগবত পুরাণ অনুযায়ী নৃত্য, নাটক যাকে বলা হয় রাসলীলা বা কৃষ্ণ লীলা। মধ্যরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মুহূর্তে ধর্মীয় গীত গাওয়া, উপবাস, দহি হান্ডি ইত্যাদি। রাসলীলাতে মূলত শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার বিভিন্ন ঘটনা দেখানো হয়। অন্যদিকে দহি হান্ডি প্রথায় অনেক উঁচুতে মাখনের হাড়ি রাখা হয় এবং অনেকে মিলে মানুষের পিরামিড তৈরি করে সেই হাড়ি ভাঙার চেষ্টা করে। তামিলনাড়ুতে এই প্রথা উড়িয়াদি নামে পরিচিত।
শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিতে মধ্যরাতে তার ছোট মূর্তিকে স্নান করিয়ে, কাপড় দিয়ে মোছা হয় এবং দোলনায় সাজানো হয়। এরপর প্রসাদ খেয়ে বিনিময় উপবাস ভঙ্গ করা হয়। অনেক বাড়িতে দরজার বাইরে, রান্নাঘরে শ্রী কৃষ্ণের পদচিহ্ন এঁকে আল্পনা দেওয়া দেয়, দেন যা শ্রীকৃষ্ণের যাত্রা হিসেবে বিবেচিত হয়।
জন্মাষ্টমীর ভোগ (Ashtami Bhog)
জন্মাষ্টমী উৎসবে নিষ্ঠা করে সব নিয়মকানুন পালন করলে শ্রীকৃষ্ণ সন্তুষ্ট হন। নন্দগোপালকে সকলে বাড়ির আদরের ছোট শিশুর মতো মনে করেন। তাই ভালোবাসে তাকে একাধিক ভোগ উৎসর্গ করা হয়। তবে তার মধ্যে জন্মাষ্টমীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কিছু প্রচলিত ভোগ। ননীগোপালের সবচেয়ে প্রিয় হল মাখন - মিছরি। তালের বড়া ও তালের ক্ষীর, মালপোয়া, ক্ষীর, মোহনভোগ, নারকেল নাড়ু, ৫৬ ভোগ, লুচি -সুজি, বাসন্তী পোলাও, মিষ্টি ইত্যাদি ননী গোপালের খুব প্রিয়। জন্মাষ্টমীর ভোগের মধ্যে ৫৬ ভোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ৫৬ রকমের নৈবেদ্যর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। নিয়ম অনুসারে ৫৬ ভোগে থাকে ১৬ ধরনের জলখাবার, ২০ টি মিষ্টি এবং ২০ ধরণের শুকনো ফল। যার মধ্যে দুধের তৈরি খাবার সবার আগে পরিবেশন করতে হয়।