Advertisement

Durga Puja Hindu Muslim Harmony: মুসলমানদের হাতেই প্রথম ভোগ গ্রহণ করেন এই দুর্গা, এক অলৌকিক গল্পগাথা

Durga Puja Hindu Muslim Harmony: বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানে মা আসেন খেতে! পুজোও নেন। প্রায় ৬০০ বছর ধরেই এই রীতি চলে আসছে এখানে। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে এক অলৌকিক গল্পগাথা।  

দেবী কোদাখাকিদেবী কোদাখাকি
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 26 Sep 2025,
  • अपडेटेड 4:17 PM IST

দুর্গাপুজো এসে গেছে। কুমোরটুলি থেকে বেশিরভাগ মাতৃ প্রতিমা মণ্ডপে এসে গেছে। আলোর রোশনাইতে সেজে উঠেছে কলকাতা শহর ও রাজ্যের অলিগলি। উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গা পুজো। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে উমা কৈলাশ থেকে মর্তে বাপের বাড়ি এসে দিন পাঁচেক থেকে ফিরে যান শ্বশুর বাড়ি। আর ঘরের মেয়েকে আদরে যত্নে ভরিয়ে, জাকজমকপূর্ণ ভাবে সেই উদযাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি গোটা বিশ্বের বাঙালি। 

ধর্মীয় মেলবন্ধন

সব মিলিয়ে দুর্গাপুজো যেন এক মিলনক্ষেত্র। দুর্গাপুজোর বহু ধর্মীয় রীতি আছে। তবু, তা সত্ত্বেও এই পুজো সার্বজনীন। নানা ধর্ম-বর্ণ বা জাতির মানুষ সামিল হন। ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে, একে অপরের আত্মার আত্মীয়। প্রকৃত অর্থেই এ যেন এক উৎসবের দেশ। এরাজ্যের এক দুর্গাপুজো সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই ধর্মীয় মেলবন্ধনের। বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানে মা আসেন খেতে! পুজোও নেন। প্রায় ৬০০ বছর ধরেই এই রীতি চলে আসছে এখানে। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে এক অলৌকিক গল্পগাথা।  

 

কোদাখাকি দুর্গা

রঘুনাথগঞ্জের এখানে দেবী পূজিতা হন 'কোদাখাকি দুর্গা' রূপে। লোকমুখে শোনা যায়, প্রায় ৬০০ বছর আগে এলাকার এক মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্যকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন দেবী। অভুক্ত অবস্থায়, তার কাছে খেতে চেয়েছিলেন তিনি। জনশ্রুতি আছে, তারপর থেকেই প্রতি বছর ওই গ্রামের কোনও না কোনও মুসলমান পরিবারের সদস্যকে স্বপ্নে দেখা দেন দেবী। তার কাছ থেকেই অন্ন গ্রহণ করার পর, মা দুর্গার বোধন হয় সেখানে।

দেবীর স্বপ্নাদেশ

পুজোর উদ্যোক্তা রঘুনাথগঞ্জের বহুরা গ্রামের জমিদার শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার। এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আদি নিবাস ছিল সাগরদিঘির মণিগ্রামে। পারিবারিক কারণে দীর্ঘকাল আগে রঘুনাথগঞ্জে চলে আসেন তাঁরা। কথিত আছে, ওই এলাকায় এক সময়, জঙ্গলে ডাকাতরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করত। একবার শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সেখান দিয়ে আসার সময় নিজের চোখে সেই পুজো দেখেছিলেন। পরে সেই রাতেই দেবী তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দেন আর ওই পুজো তাঁর বাড়িতে করতে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে, দেবী এটাও নির্দেশ দেন যে, তিনি ওই গ্রামে প্রথম অন্ন গ্রহণ করবেন কোনও মুসলমান পরিবারের থেকেই।

Advertisement

কাউনের চালের নাড়ু

শোনা যায়, রঘুনাথগঞ্জের এক মুসলমান বিধবা মহিলা ছিলেন। শরৎচন্দ্রবাবু প্রথমে তাঁকে এই প্রস্তাব দেন। কিন্তু, তিনি জানান তাঁর কার্যত নুন আনতে পান্তা ফোরানোর মত অবস্থা। কী ভাবে তিনি দেবী দুর্গার ভোগের ব্যবস্থা করবেন? কথিত আছে, সেই রাতেই নাকি দেবী তাঁকেও স্বপ্নাদেশ দেন যাতে, তিনি সামান্য কিছু হলেও ভোগস্বরূপ নিয়ে আসেন। পরের দিন সকালেই, জঙ্গলে ছোটেন তিনি। কোনও ভাবে সেখান থেকে, সামান্য পরিমাণে কাউনের চাল জোগাড় করে আনেন, আর তা দিয়ে নাড়ু বানিয়ে দেবী দুর্গাকে ভোগ দেন। সেখান থেকেই শুরু। আজও সব কিছুর সঙ্গে কাউনের চালের নাড়ু ভোগে দেওয়া রীতি এই পুজোয়। সেই সঙ্গে থাকে, ভাত, সজনেডাটা, কাঁঠাল এবং গঙ্গার ইলিশ।

 

কেন এরকম নাম? 

মুর্শিদাবাদের ওই অঞ্চলে সেই সময় কাউনের চালকে 'কোদা' বলা হত। আর সেই কোদা থেকেই এই দেবীর নাম হয় 'কোদাখাকি দুর্গা'। তবে, এই মত সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অনেকে বলেন, এক সময় নাকি ওই গ্রামে ভয়ঙ্কর বন্যা হয়েছিল। সেই সময় দেবী এক মুসলমান পরিবারকে স্বপ্নাদেশ দেন তিনি পুজোয় ভুরুর চালের ভোগ পেতে চান। ভুরুর চালের আরেক নাম হল কাউন। সেই থেকেও কাউনের চাল দিয়ে পুজো দেওয়ার রীতি রয়েছে এখানে বলেই মনে করা হয়।

দুর্গাকে শাঁখা, পলা দিয়ে সাজান মুসলমান মহিলারা

তবে, মতবাদ যাই থাকুক না কেনও, পুজোর সময় এমন সম্প্রীতির চিত্র বঙ্গদেশে খুব একটা আছে বলে জানা নেই। এখানে দেবী দুর্গাকে শাঁখা, পলা দিয়ে সাজান এলাকার মুসলমান মহিলারা। সেই সঙ্গে পুজোর চারদিনই তাঁদের উপস্থিতি ছাড়া, পুজো সম্পন্ন হয় না এখানে। তবে, এই পুজোয় যেমন সন্ধ্যায় কোনও আরতি হয় না, তেমনই নেই অঞ্জলি দেওয়ার প্রথাও।

ধর্মীয় বাছবিচার থাকে না

দেবী কোদাখাকির নাম শুধুমাত্র এই রঘুনাথগঞ্জেই সীমাবদ্ধ নেই এখন। এলাকার মানুষের থেকে, এখন মুখে মুখে তাঁর নাম ছড়িয়েছে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের প্রতিটি কোনায়। সত্যিই এই পুজো এক প্রকৃত মিলনক্ষেত্রের প্রতীক। পুজোর চারদিন স্থানীয়রা ভিড় জমান এখানে। প্রসাদ গ্রহণ থেকে পুজোর রীতি সবেতেই অংশ নেন। কোনও ধর্মীয় বাছবিচার থাকে না এই পুজোতে।

 

Read more!
Advertisement
Advertisement