বিষাদ মনে দশমীর দিন দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জন করেন বাঙালি। তবে দুর্গা পুজো হতে না হতেই শুরু হয় লক্ষ্মী পুজোর তোড়জোড়। মা লক্ষ্মী হলেন ধনসম্পদের দেবী। সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির জন্য লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। কোজাগরী পূর্ণিমার দিন ঘরে ঘরে পূজিত হন মা লক্ষ্মী। ধন, যশ, খ্যাতি, সুস্বাস্থ্যের জন্য দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে ওঠে বাংলার প্রায় প্রতিটা পরিবার।
‘কোজাগরী’ কথাটির অর্থ
বাংলায় শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। ‘কোজাগরী’ কথাটির অর্থ ‘কে জেগে আছো?’ হিন্দু পুরাণ মতে, আশ্বিনের এই পূর্ণিমার রাতে দেবী লক্ষ্মী এসে ঘরে ঘরে খোঁজ নিয়ে যান, কে জেগে আছে। এই রাতে যে ব্যক্তি জেগে দেবীর আরাধনা করেন তাঁর ঘরেই প্রবেশ করেন দেবী লক্ষী। দেখে নিন এই বছরের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর নির্ঘণ্ট।
লক্ষ্মী পুজো এক চিরন্তন উৎসব
বাঙালি হিন্দু ঘরে লক্ষ্মী পুজো এক চিরন্তন উৎসব। অনেকেই সারা বছর প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করে থাকেন। এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতে লক্ষ্মীর পুজো হয়। খারিফ শস্য ও রবি শস্য যেই সময় হয়, ঠিক সেই সময় বাঙালি মেতে ওঠে লক্ষ্মীর পুজোয়। তবে পুজোর উপাচার পরিবর্তন হয় মাস ভেদে।
লক্ষ্মী পুজো কবে?
এবছর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো পড়েছে ৬ অক্টোবর, সোমবার।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর পূর্ণিমা তিথি (Lakshmi Puja Purnima Timing)
৬ অক্টোবর, বেলা ১১/২২/৪২ থেকে ৭ অক্টোবর সকাল ৯/৩১/২৭ অবধি থাকবে পূর্ণিমা তিথি।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর নিয়মকানুন (Kojagori Lakshmi Puja Rules)
গঙ্গাজল ছিটিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে লক্ষ্মী পুজো শুরু করতে হয়। পুজোর স্থানে তামার পাত্রে জল রেখে তা সূর্য দেবতাকে অর্পণ করার নিয়ম। মাটির গোল ডেলার উপর কিছু ধান রেখে, ঘটে স্বস্তিক বা পুত্তলিকা চিহ্ন এঁকে বসান। ঘটের মধ্যে গঙ্গাজল দিয়ে, তার মধ্যে সিঁদুরের ফোঁটা লাগানো বিজোড় সংখ্যার পাতা বিশিষ্ট আম্র পল্লব রাখুন। পাতার উপর হরিতকী, ফুল, দূর্বা, ডাব বা কলা দিয়ে ঘট সাজান। এবার লক্ষ্মী পুজো শুরু করুন নিষ্ঠা করে।
লক্ষ্মী পুজোর আলপনা (Kojagori Lakshmi Puja Alpona)
অন্যান্য পুজো আর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আলপনাতে বেশ কিছু পার্থক্য থাকে। এই পুজোর মূল আলপনার সঙ্গে বাড়ি জুড়ে আঁকা হয় ধানের ছড়া, মুদ্রা, আর মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের ছবি। এই প্রতীকগুলি পুজোর বিষয়ে যেমন ব্যাখ্যা করে, তেমনই পুজোর আচারের একটা অংশ হয়ে উঠেছে এই বিশেষ ধরনের আলপনা।
দেবীর লক্ষ্মীর স্তোত্র (Goddess Lakshmi Strotra)
লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানং যথাসম্ভব নিত্যশঃ।
স্থিরাভাব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি।।
বন্দে বিষ্ণু প্রিয়াং দেবী দারিদ্র্য দুঃখনাশিনী।
ক্ষীরোড সম্ভবাং দেবীং বিষ্ণুবক্ষ বিলাসিনীঃ।।
লক্ষ্মী দেবীর ধ্যান মন্ত্র (Goddess Lakshmi Dhyan Mantra)
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।।
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষি তাম।
রৌকনোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
লক্ষ্মী পুজোর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র (Goddess Lakshmi Pushpanjali Mantra)
"নমামি সর্বভূতানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে যা গতিস্ত্বৎপ্রপন্নানাং সা মে ভূয়াৎ ত্বদর্চনাৎ।" যার অর্থ 'হে হরিপ্রিয়ে, তুমি সকল প্রাণীকে বরদান করে থাকো, তোমাকে প্রণাম করি। যারা তোমার শরণাগত হয়, তাদের যে গতি, তোমার পুজোর ফলে আমারও যেন সেই গতি হয়।'
লক্ষ্মী পুজো প্রণাম মন্ত্র (Goddess Lakshmi Pronam Mantra)
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী...
লক্ষ্মী পুজো স্তব (Goddess Lakshmi Puja Sthab)
ওঁ ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে। যথা ত্বং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভব ময়ি স্থিরা।। ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া। পদ্মা -পদ্মালয়া সম্পদপ্রদা শ্রীঃ পদ্মাধারিণী। দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেৎ। স্থিরা লক্ষ্মীভবেস্তস্য পুত্রদারদিভিঃ সহ।।