"রথ দেখা কলা বেচা"। প্রবাদটি আমরা সবাই শুনেছি। মাঝে মধ্যে ব্যবহারও করি। অর্থাৎ এক সুযোগে দুটি কাজ একসঙ্গে করে ফেলা। কিন্তু রথ দেখার সঙ্গে কলা বেচার যে সম্পর্ক, এটা কীভাবে এল। এটা আমরা অনেকেই জানি না। দুয়ের মধ্যে তো কোনও মিলই নেই। এমনকী জগন্নাথ দেবের পুজোয়. কলা ব্যবহার হলেও কলা বেচার সম্পর্ক কীভাবে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। চলুন রথের আনন্দ উপভোগ করার আগে এবার জেনে নিই।
দেশে সবচেয়ে বড় রথ জগন্নাথ ধাম পুরীর রথ। তবে এ রাজ্যেও প্রচুর বড় বড় রথের আয়োজন রয়েছে। এমনিতে প্রতিটি শহর, গ্রামে রথ যাত্রা অনুষ্ঠান হয়। তার মধ্যে একটি জায়গার রথের দিকে সবার নজর থাকে। সেটি হল প্রাচীনতম মাহেশের রথ। সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর উপন্যাসে মাহেশের রথকে ঘিরে সুদীর্ঘ রচনা লিখেছেন। ‘রাধারাণী নামে এক বালিকা মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিল। তারপর সেই ছোট মেয়েটির হারিয়ে যাওয়া, আর সেখান থেকে গল্প এগিয়েছে। যা বাংলা সাহিত্যে অমরগাথায় স্থান করে নিয়েছে। আবার বঙ্কিমচন্দ্রের নৈহাটির বাড়ির লাগোয়া রাধাবল্লভ জিউ-র মন্দিরেও দাঁড়িয়ে থাকে একটি রথ। প্রতিবছর রথের দিনে তাতে চড়েই বেড়াতে বেরোন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা।
কলার ইতিহাস
মাহেশের রথই হোক কি নৈহাটির, রথযাত্রায় একটি চালু প্রথা হল দেবতাকে তাঁরা উৎসর্গ করেন কলা আর পান। নৈহাটিতে এর সঙ্গে থাকে ছোট ছোট মোড়কে রাখা চিনি। পানের মতো হালকা জিনিস ছুঁড়লে তা রথের ওপরে থাকা দেবমূর্তির কাছে পৌঁছবে না, এই আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত কলা জড়িয়ে পান ছোঁড়ার চল হয়েছিল। আর, দেবতাকে যদি কিছু উৎসর্গ করতে হয়, তবে তা কিনতে হবে। সুতরাং রথযাত্রা ঘিরে যে সব জিনিসের বেসাতি চলে, কলা সেখানে থাকবেই।
পান কেন?
এবার অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে, পান কেন দেওয়া হয়? আসলে ভারতের প্রায় সর্বত্রই প্রথা আছে, স্থানীয় প্রধান শস্য দেবতাকে উৎসর্গ করা হয়। মাহেশ যে অঞ্চলে, সেই শ্রীরামপুরের কাছে পান চাষ হয় বিপুল পরিমাণে। একে তো অঞ্চলের প্রধান ফসল, তায় অর্থকরী, সুতরাং দেবতাকে পান দিয়ে পানের ফলন ও ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি কামনায় পান অর্পণ করা হয়।শ্রীরামপুরের রথ থেকেই ‘রথ দেখা কলা বেচা’ প্রবাদটির জন্ম হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। কিছু কিছু মতভেদ আছে। তবে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রচারিত মত।