সরস্বতী পুজো একেবারে দোরগোড়ায়। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পূজিত হন দেবী সরস্বতী। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে মা সরস্বতীর অবতারণা হয়েছিলেন। পুরাণ মতে, বসন্ত পঞ্চমীতে মা সরস্বতীর আরাধনা করলে মা লক্ষ্মী ও দেবী কালী উভয়ের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। বাগদেবীর পুজোর জন্য গোটা বছর অপেক্ষায় থাকে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের প্রার্থনা করেন সরস্বতী মায়ের কাছে।
শ্রী পঞ্চমীর দিন সরস্বতী পুজো সম্পন্ন হয়। সাধারণত নিয়মে পুজো হলেও বেশ কয়েকটি সামগ্রির প্রয়োজন হয়। যেমন- আমের মুকুল, অভ্র- আবির, দোয়াত- খাগের কলম, পলাশ ফুল, বই ও বাদ্যযন্ত্রাদি। এছাড়াও বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল ও মালা প্রয়োজন হয়। সরস্বতী পুজোয় পলাশ ফুল থাকা আবশ্যক। তবে এর কারণ অনেকরই অজানা। যদিও এই আচারের সঙ্গে অনেকগুলি কারণ প্রচলিত আছে।
সরস্বতী পুজো ও পলাশ ফুলের গুরুত্ব
সরস্বতী পুজোর ঠিক পরের দিন শীতল ষষ্ঠীর অর্চনা করা হয়। মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদে সন্তান হয় বলেই বিশ্বাস। আর সরস্বতী পুজোর ঠিক পরের দিন ঠান্ডা খাবার খেয়ে তাঁরই অর্চনা করা হয়। এইসব কারণেই পলাশ ফুল ছাড়া 'পলাশ প্রিয়া' সরস্বতীর পুজো সম্পন্ন হয় না।
পুরাণ মতে, দেবী সরস্বতীর সঙ্গে প্রজনন এবং উর্বরতা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব মোচনের সম্পর্ক রয়েছে। ঋষি গৃৎসমদ ঋক্মন্ত্র উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতি।’যেখানে সরস্বতীকে মাতৃশ্রেষ্ঠা, শ্রেষ্ঠ নদী এবং শ্রেষ্ঠ দেবীরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যুৎপত্তিগত অর্থে সরস্বতী নদী, সরস্ (জল) + মতুপ্ + ঙীপ্ (অর্থাৎ স্ত্রীলিঙ্গবাচক ‘ঈ’ =সরস্বতী। নদীদের মধ্যে তিনি শুদ্ধা, ‘নদীনাং শুচির্যতী’, আসমুদ্র তার ধারপথ, ধারপথ, ‘গিরিভ্য আসমুদ্রাৎ’।
মূলত বসন্ত কালেই পড়ে সরস্বতী পুজোর তিথি। বছরের এই সময়ে রাঢ় অঞ্চলগুলি রাঙা হয়ে যায় পলাশ ফুলে। এজন্যে মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীকে পলাশ ফুল অর্পণ করা হত। আর সেই রীতিই এখনও প্রচলিত আছে।
অন্য একটি বিশ্বাস অনুযায়ী, পলাশ ফুল, সরস্বতী পুজোর অন্যতম উপচার। ঋতুমতী নারীই গর্ভধারণে সমর্থ, তা কারও অজানা নয়। আর পলাশ রক্তবর্ণ। ঋতুমতীর রজোদর্শনের রং তাই। সেজন্যে বলা হয়, এর প্রতীক হিসেবে শ্বেতশুভ্রা দেবী হয়ে উঠেছেন ‘পলাশপ্রিয়া’। জেনে রাখা ভাল, পলাশ পাতা আজও বন্ধ্যাত্ব দূর করতে ব্যবহৃত হয়। বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো লাল মাটি অধ্যুষিত অঞ্চলে পুত্রসন্তান লাভের জন্যে মহিলারা পলাশপাতা বেটে খেতেন।
শুধু তাই নয়, সরস্বতী পুজোর সময়কাল মাঘী শ্রীপঞ্চমী তিথি। জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘শীতকাল হল জড়তার কাল। মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথি থেকেই শীতের জড়তা কেটে যেতে থাকে, ঋতুতে লাগে প্রথম বসন্তের ছোঁয়া। সরস্বতীর আবির্ভাবে সকল জড়তামুক্তি, মনেরও, ঋতুরও।’
সরস্বতী পুজো ২০২৫-এর তারিখ (Saraswati Puja 2025 Date)
২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি (বাংলায় ২০ মাঘ), সোমবার
সরস্বতী পুজো ২০২৫-এর পঞ্চমী তিথি (Saraswati Puja 2025 Panchami Tithi)
২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২।২৯ মিনিট থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯।৫৯ মিনিট পর্যন্ত থাকবে পঞ্চমী তিথি।