সরস্বতী পুজো একেবারে দোরগোড়ায়। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পূজিত হন দেবী সরস্বতী। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, এদিন মা সরস্বতীর অবতারণা হয়েছিলেন। বসন্ত পঞ্চমীর দিনটি সনাতন ধর্মে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য। কারণ এদিনে জ্ঞান, বিদ্যা এবং শিল্পের দেবী সরস্বতীর পুজো করা হয়। তবে বাঙালির যে কোনও উৎসবে খাওয়া -দাওয়া সংক্রান্তও বহু রীতি আছে। সেরকমই সরস্বতী পুজো দিন বহু বাঙালি বাড়িতে জোড়া ইলিস বরণের (Jora Ilish Boron) নিয়ম আছে।
বর্তমানে ইলিশ বরণ রীতিনীতি অনেকটা শিথিল হয়েছে মানুষের কর্ম ব্যস্ততার জন্য। তবে শহরে কম হলেও, গ্রামাঞ্চল বা শহরতলিতে এখনও এই পার্বণ ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। তবে এই রীতি, পশ্চিমবাংলার আদি বাসিন্দারা অর্থাৎ এদেশীয়রা পালন করেন না। জোড়া ইলিশ মাছ বরণ পূর্ববঙ্গের দক্ষিণের জেলাগুলিতেই বেশি প্রচলিত ছিল। তার মধ্যে বিক্রমপুর অঞ্চলেই এই প্রথার উদ্ভব বলে মনে করা হয়।
জোড়া ইলিশ বরণ - বিয়ে প্রথা (Jora Ilish Boron ritual in Saraswati Puja)
হিন্দু ধর্মে, জোড়া ইলিশ কেনা খুব শুভ বলে মনে করা হয়। সরস্বতী পুজোর দিন জোড়া ইলিশ মাছ বরণ বা ইলিশ মাছের বিয়ে দেওয়া অন্যতম লোকাচারটি সব পূর্ববঙ্গীয় মানুষের বাড়িতে রীতি নেই। তবে আগেই বলে রাখা ভাল, সরস্বতী পুজোর সঙ্গে এই রীতির সরাসরি কোনও যোগ নেই। তবে একই চান্দ্র তিথিতে হয়, দুই অনুষ্ঠান। এজন্যে একই দিনে পড়ে।
সরস্বতী পুজোর দিন সকালে কাঁচা হলুদ মেখে স্থান করে বাজার থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে আসা হয়। বাড়িত ঢোকার সময়, ধান, দূর্বা, তেল, সিঁদুর ও কাঁচা হলুদ সহযোগে মাছটি উলু ও শঙ্খ ধ্বনিতে কুলোর উপর সাজিয়ে রাখা হয়। কিছু পরিবারে রীতি রয়েছে, জোড়া ইলিশ মাছ বরণের সময়, দুটি গোটা বেগুন ও লাউ ডগাও রাখা।
ইলশার বিয়ে
অনেক বাঙাল পরিবারের নিয়ম, একটি ইলিশ বরণ করা। সেখানে ইলিশের সঙ্গে নোড়া রাখা হয়, যাকে নোড়া দিয়ে জোড়া বা ইলশার বিয়ে বলে। নোড়াটি পুরুষ এবং মাছটিকে নারীর রূপে ধরা হয় এবং উলু- শঙ্খ ধ্বনি, ধান- দূর্বা, তেল, সিঁদুর, কাঁচা হলুদ দেওয়া হয় তখন।
বিশেষ নিয়মকানুন
অনেকে বাড়িতে ইলিশ বরণের সময় মুখে টাকা গুঁজে দেওয়া হয়। যিনি মাছ কাটবেন, সাধারণত এই টাকাটি তার প্রাপ্য। তবে মাছা কাটার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ নিয়ম। আঁশ এদিক ওদিক যাতে ছড়িয়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। কলা পাতার উপর রেখে অনেকে আঁশ ছাড়ান। পরে সেটি মুড়ে যে কোনও পরিষ্কার স্থানে পুঁতে দিতে হয়। জোড়া ইলিশ বরণ করার পর এই মাছ রান্নার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ রীতি। ফোঁড়ন এবং সমস্ত তরকারি একসঙ্গেই দিতে হয় কড়াইতে। এই রান্নায় কোনও গুঁড়ো মশলা ব্যবহার করার হয় না। কাঁচা হলুদ এবং কাঁচা লঙ্কা ব্যবহার করে এই পদ রান্না করা হয়।
সরস্বতী পুজোয় এই নিয়ম কেন?
সরস্বতী পুজোর দিন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই রীতি। এর সঠিক কারণ নিয়ে নানা মতভেদ আছে। মনে করা হয়, পূর্ববঙ্গের মৎসজীবি সম্প্রদায়রা এক সময়, বিজয়া দশমীর পর আর ইলিশ মাছ ধরতেন না। বসন্ত পঞ্চমীর সময় থেকে আবার মাছ ধরতেন। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সময় থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কালে অপরিণত ইলিশ ধরা পড়ে। এটাই খোকা ইলিশদের সমুদ্রে ফেরার সময়। শোনা যায়, বহু যুগ আগে পূর্ব বাংলার মৎসজীবিরা এদিন বিশেষ মঙ্গলাচরণের মধ্যে দিয়ে ইলিশ ধরার সূচনা করতেন।
আবার অন্য একটি মত অনুসারে, ব্রাহ্মণরা আগে কট্টর নিরামিষাশী থাকার ফলে মাছ খেতেন না। এরপর ধীরে ধীরে প্রচলন হল শাস্ত্রে বলা আছে যে, মাছেরা আসলে সমুদ্রের ফল বা জল তরু তাই অনায়াসে মাছকে শাক সব্জির মধ্যে ফেলা যায়, এই কথা।
সরস্বতী পুজো ২০২৫-এর তারিখ (Saraswati Puja 2025 Date)
২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি (বাংলায় ২০ মাঘ), সোমবার
সরস্বতী পুজো ২০২৫-এর পঞ্চমী তিথি (Saraswati Puja 2025 Panchami Tithi)
২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২।২৯ মিনিট থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯।৫৯ মিনিট পর্যন্ত থাকবে পঞ্চমী তিথি।