বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ দুর্গাপুজো এসে গেছে। দেবী দুর্গা, মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয় হয়। আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গাপুজোর উৎসব পালিত হয়। যদিও প্রকৃত অর্থে, উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকে। এবছর, শারদীয়া নবরাত্রি শুরু হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে শারদীয়া নবরাত্রি শুরু হয়।
নবরাত্রি
মা দুর্গার উদ্দেশ্যে উত্সর্গীকৃত একটি উত্সব হল নবরাত্রি। হিন্দুধর্মে সবচেয়ে পবিত্র এবং শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়। শারদীয়া নবরাত্রি অধর্মের ওপর ধর্মের বিজয়ের প্রতীক। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গোৎসব ও অন্যান্য রাজ্যের নবরাত্রির উদ্দেশ্য একই, দেবী দুর্গার আরাধনা। নবরাত্রির ৯ দিনে দুর্গার নয়টি রূপের পুজো করা হয়। এই নবরাত্রিতে মা ত্রিপুরা ভৈরবী, মা ধূমাবতী, মা বগলামুখী, মা কালী, মা তারা দেবী, মা ত্রিপুরা সুন্দরী, মা ভুবনেশ্বরী, মা ছিন্নমস্তা, মা মাতঙ্গী ও কমলা দেবীর পুজো করা হয়।
বিশ্বাস অনুসারে, শারদীয়া নবরাত্রিতে দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু আচার-অনুষ্ঠান করলে ধন-সম্পদের দেবীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। হিন্দুধর্মে, দেবী লক্ষ্মীকে ধন-সম্পদের দেবী হিসাবে পুজো করা হয়। বলা হয়, যে কেউ যদি পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর পুজো করে, সে দেবীর আশীর্বাদ লাভ করেন। নবরাত্রিতে দেবী লক্ষ্মীর পুজো করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলেও বিবেচিত হয়।
শারদীয়া নবরাত্রি কেবল দেবী দুর্গার উপাসনার সময় নয়, তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগও। মনে করা হয় যে, এই সময় কিছু কাজ করলে, দেবী লক্ষ্মী ঘরে আসে এবং দারিদ্র্য দূর করে। জেনে নিন, নবরাত্রিতে দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে সম্পর্কিত কোন বিশেষ রীতিনীতি মানবেন।
পদ্ম ফুল নিবেদন করুন
দেবী লক্ষ্মী পদ্ম ফুল খুব পছন্দ করেন। তাই, শারদীয়া নবরাত্রিতে তাঁকে একটি পদ্ম ফুল নিবেদন করলে বাড়িতে সমৃদ্ধি আসবে বলে বিশ্বাস করা হয়। পদ্ম ফুল শুধুমাত্র সমৃদ্ধির প্রতীকই নয়। বাড়িতে ইতিবাচক পরিবেশও তৈরি করে।
ঘরে ১১টি প্রদীপ জ্বালান
নবরাত্রির রাতে উত্তর-পূর্ব দিকে ১১টি প্রদীপ জ্বালানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। ঘি বা তিলের তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালান এবং নিশ্চিত করুন যে সেগুলি সারা রাত ধরে যেন জ্বলে। এই রীতি ঘর থেকে দারিদ্র্য দূর করে এবং সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।
রুপোর মুদ্রা রাখুন
শারদীয়া নবরাত্রির সময়, দেবী লক্ষ্মীর পায়ের কাছে একটি রুপোর মুদ্রা রাখুন। নবরাত্রির পরে, মুদ্রাটি আপনার সিন্দুক বা পার্সে রাখুন। এই প্রতিকার অর্থ, ঋণ এবং অন্যান্য আর্থিক সমস্যা দূর করবে।
শ্রীযন্ত্রের পুজো করুন
নবরাত্রির সময় শ্রীযন্ত্র স্থাপন করলে দেবী লক্ষ্মীর বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়। লাল কাপড়ে শ্রীযন্ত্র স্থাপন করুন এবং প্রতিদিন কুমকুম, চালের দানা এবং ফুল নিবেদন করুন। বিশ্বাস করা হয় যে শ্রীযন্ত্রের পুজো করলে দারিদ্র্য দূর হয় এবং সম্পদের ধারাবাহিক প্রবাহ নিশ্চিত হয়।
লক্ষ্মী স্তোত্র জপ করুন
নবরাত্রির প্রতি রাতে লক্ষ্মী স্তোত্র, শ্রীসূক্ত বা 'ওঁ শ্রীম হ্রিম শ্রীম মহালক্ষ্ম্যৈ নমঃ' মন্ত্র জপ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই অনুশীলন কেবল আর্থিক লাভই বয়ে আনে না বরং মানসিক শান্তিও বয়ে আনে।
সিন্দুকে গোমতী চক্র
নবরাত্রির সময়, দেবী লক্ষ্মীকে একটি গোমতী চক্র অর্পণ করুন। পরে, এটি আপনার সিন্দুক বা পার্সে রাখুন। গোমতী চক্রকে দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি সম্পদ নিশ্চিত করে এবং অপ্রত্যাশিত লাভের সম্ভাবনা তৈরি করে।