হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মনে করা হয়, মানুষ হোক বা পশু, প্রত্যেকে নিজের কর্ম অনুসারে জন্মের চক্রে বাঁধা পড়েন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর মোক্ষপ্রাপ্তি না হয়। যদি জীবন চক্রে কোনও পাপ না করে পার করে নেওয়া যায়, তাহলে মোক্ষপ্রাপ্তির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি কোনও জন্মে ভাল কাজ করা হয় তাহলে আরও ভাল পরজন্ম মেলে।
অস্থি বিসর্জন
মনে করা হয় যে গঙ্গার মত পবিত্র নদীর জল পান করলে বা স্নান করলে মানুষ সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পায়। এই কারণে দাহ সংস্কারের পরে অস্থির ছাই গঙ্গাতে প্রবাহিত করার রীতি রয়েছে। মনে করা হয় যে মানুষের অস্থি গঙ্গা নদীতে এই বছরের পর বছর থেকে যায়। গঙ্গা নদী ধীরে ধীরে সে সমস্ত অস্থির মাধ্যমে মানুষের পাপ ধুয়ে দেয়।
হিন্দু ধর্মে অন্তিম সংস্কার কোনও নদীর পাড়েই করা হয়। এই স্থানে শ্মশানঘাট স্থাপন করা হয়। শ্মশানঘাটে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে তার দাহ সংস্কার, অন্তিম সংস্কার করা হয়।
শ্মশানঘাটে আত্মা, ভূত-প্রেত ইত্যাদি নিবাসও থাকে বলে মনে করা হয়। এখানে অঘোরীও থাকে। এ কারণে যখন থেকে চাঁদ আকাশে থাকে, সেই সময় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত জীবিত মানুষদের শ্মশান ঘাটে বা তার আশপাশে দিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
শ্মশান অধিপতি
ভগবান শিব এবং মা কালী শ্মশানের এবং শ্মশানঘাটের ভগবান বলে প্রতিষ্ঠিত। ভগবান শিব যখন ভস্ম দিয়ে পুরো ঢাকা থাকেন এবং ধ্যানমগ্ন থাকেন, সেখানে মা কালী দুরাত্মাদের পিছু ধাওয়া করেন।
শ্মশানের দেখভাল করেন ভগবান শিব
এমন মনে করা হয় যে শরীরের অন্তিম সংস্কারের পর ভগবান শিব মৃত আত্মাকে নিজের ভেতরে সমাহিত করে নেন। এ কারণে কারও সে সময় সেখানে পৌছে এই প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া উচিত নয়। এমনকী মা কালীর প্রকোপের মুখেও পড়তে হতে পারে অসময়ে গেলে।
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে দিনের বেলাতেও কোনও ব্যক্তির শ্মশান ঘাটে ঘুরে বেড়ানো উচিত নয়। এই সময়েও খারাপ আত্মারা সক্রিয় থাকে এবং মানুষ ওই সমস্ত খারাপ আত্মার সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম হন না।
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে রাতে নেগেটিভ শক্তিগুলি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই নেতিবাচক শক্তিগুলি মানসিক রূপে কমজোর কোনও ব্যক্তিকে নিজের কবলে করে ফেলতে পারে। যদি কোনও ব্যক্তি মানসিকভাবে দুর্বল থাকে এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে প্রশ্রয় দেন, তাহলে এই সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। প্রায়শই যখন কোনও ব্যক্তি এই নেতিবাচক শক্তির প্রভাবে মধ্যে চলে আসে তখন তার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তিনি ওই শক্তির বশে চলে আসেন।
এতে কোন সন্দেহ নেই ইতিবাচক এবং নেতিবাচক শক্তির প্রভাব সমস্ত মানুষের ওপরে থাকে কিন্তু দুর্বল চিন্তাভাবনার লোকেরা নেতিবাচক শক্তির কব্জায় খুব দ্রুত চলে আসেন। এ কারণে বলা হয় যে রাতে কোন ব্যক্তি শ্মশান ঘাটে যাওয়া উচিত নয় এমনকি পাশ দিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
হিন্দু ধর্মে শেষকৃত্য বা দাহ সংস্কারের কিছু নিয়ম ঠিক করা হয়েছে। যা গুরুত্বপূর্ণ এবং যা মাথায় রেখে চলা উচিত।
যে কোনও শব দেহ খুব দ্রুত পুড়িয়ে ফেলা উচিত নয়। যদি কোন ব্যক্তি দিনের বেলায় মৃত্যু হয় তাহলে তার ৯ ঘন্টা পরে অন্তিম সংস্কার করা উচিত। কিন্তু যদি কোনও ব্যক্তি মৃত্যু রাতে হয় তাহলেও দ্রুত শবদেহ অন্তিম সংস্কার করা উচিত নয়। কারণ বলা হয় যে যম যেমন মৃতদেহ নিতে আসে, তেমনই প্রাণ ফিরিয়েও দিতে পারে। তাই কখনও দ্রুত তা দাহ করা উচিত নয়।
আপনার স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকেন, তাহলে কারও শবযাত্রায় শ্মশানে যাবেন না। যদি কোনও পুরুষকে জানতে পারেন যে তার স্ত্রী গর্ভবতী রয়েছেন তাহলে সেই সময় তিনি পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজন কারো মৃত্যু হলে সেই দাহ-সংস্কার কার্যকলাপে অংশ নেবেন না। তার দূরে থাকা উচিত। তিনি শ্মশান ঘাটেও কথাটি যাবেন না।
যদি কারও মৃত্যু দক্ষিণায়ন. কৃষ্ণপক্ষ রাত্রিতে হয় তাহলে তাঁর মৃত্যুতে দোষ পাওয়া যায়। এ কারণে শবদেহ জ্বালানোর আগে ব্রাহ্মণ ভোজন অথবা দানপুন্য করে এই দোষ নিবারণ করা যেতে পারে।