ভারত, যাকে সংস্কৃতির তীর্থক্ষেত্র বলা হয়, বিশ্বে তার ধর্মীয় রীতিনীতি আর রহস্যের জন্যেও বিখ্যাত। এই দেশে বিভিন্ন ধর্মের সহস্র ধর্মীয় স্থান রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি তাদের রহস্যময় আচার আর কাহিনির জন্যও পরিচিত।
বিশ্বের বিশ্বাসের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত ভারতের কেরলে রাজ্যে একই রকম একটি মন্দির রয়েছে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত রহস্য। শোনা যায়, শ্রী কৃষ্ণের এই মন্দিরে ভগবানের মূল মূর্তির মুখ আর চেহারা ক্ষুধার জ্বালায় পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
শোনা যায়, যদি শ্রী কৃষ্ণের এই বিগ্রহের সামনে সময় মতো ভোগ অর্পণ না করা হয়, তাহলে খিদের জ্বালায় তার মুখ শুকিয়ে যায়, তাকে রোগা রোগা লাগে। এমনটাই বিশ্বাস করেন এই মন্দিরের পুরোহিত থেকে ভক্তকূল। চলুন জন্মাষ্টমীর শুভ মুহূর্তে এই মন্দিরের এমন কযেকটি মজার, অদ্ভুত, অলৌকিক জনশ্রুতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক...
শ্রী কৃষ্ণের এই মন্দিরটি (Thiruvarppu Krishna Temple) কেরলের কোট্টায়ম জেলার তিরুভেরাপু বা তিরুভারাপ্পু (Thiruvarppu) এলাকায় রয়েছে। এটি এখানে একটি অলৌকিক (জাগ্রত দেবতার মন্দির) মন্দির হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণ, এখানে স্থাপিত ভগবান কৃষ্ণের মূর্তি একেবারে ছোট্ট শিশুর মতোই খিদে একেবারেই সহ্য করতে পারে না।
১৫০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরে ভগবান কৃষ্ণকে দিনে ১০ বার ভোগ অর্পণ করা হয়। শোনা যায়, থালায় রাখা প্রসাদ ধীরে ধীরে নাকি কমতে থাকে। এটি একটি ধর্মীয় বিশ্বাস বা জনশ্রুতি যে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ যখন কংসকে হত্যা করেছিলেন, তখন তিনি খুব ক্ষুধার্ত ছিলেন এবং তারপর থেকে তার মূর্তিটি এখানে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রয়েছে।
শোনা যায়, এই মন্দিরে ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে খাবার দিতে একটুও দেরি হলে, মূর্তির চেহারা আর মুখের পরিবর্তন হতে শুরু করে। এই মন্দির (Thiruvarppu Krishna Temple) দিনে মাত্র ২ মিনিটের জন্য বন্ধ থাকে। শোনা যায় যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে মাত্র ২ মিনিটের জন্য ঘুমোন।
মন্দিরের চাবির সঙ্গে একটি কুঠারও পুরোহিতের কাছে থাকে। কারণ, চাবি দিয়ে যদি কোনও কারণে দরজার তালা না খোলে, সে ক্ষেত্রে ওই তালা ভাঙারও অনুমতি রয়েছে মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের কাছে। বছরের পর বছর ধরে এই প্রথাই চলে আসছে এখানে।
সহস্র বছরের প্রথা মেনে এই মন্দির গ্রহণের সময়েও বন্ধ করা হয় না। ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, গ্রহণকালে দেবতারা সমস্যায় পড়েন। তাই দেব-স্থান ওই সময় বন্ধ রাখা হয়। তবে ভগবান কৃষ্ণের মূর্তির কথা মাথায় রেখে এখানে মন্দিরের দরজা খোলা রাখা হয় এবং সময়ে সময়ে তাকে ভোগও দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এখানে যে ব্যক্তি এই মন্দিরের প্রসাদ খান, তাকে কখনও খিদের জ্বালায় কষ্ট পেতে হয় না।
ছবি: তিরুভারপ্পু কৃষ্ণ মন্দিরের (Thiruvarppu Krishna Temple) ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত।