কার্তিক মাসে কৃষ্ণ পক্ষ শুরু হওয়ার চতুর্থ দিনে পালন করা হয় করবা চৌথ। স্বামীর মঙ্গলকামনায় উপবাস রাখেন স্ত্রী এবং সন্ধ্যেয় বরের চাঁদ দেখে খাবার খেয়ে তা ভঙ্গ হয়।
'করবা' অর্থাৎ মাটির পাত্র এবং 'চৌথ' অর্থাৎ চতুর্থী, এই দুই মিলিয়েই এই উৎসবের নামকরণ। সারাদিন উপবাস করে সন্ধ্যা বেলা চালুনিতে চাঁদ ও স্বামীর মুখ দেখে উপবাস ভাঙ্গাই মূল প্রথা।
পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এহং হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যে করবা চৌথ বিশেষ জনপ্রিয়। লোককথা অনুযায়ী 'করবা' নামের এক পতিব্রতা নারী যমরাজের মুখোমুখি হয়ে কুমীরের কাছ থেকে উদ্ধার করেছিলেন তাঁর স্বামীকে। তারপর থেকেই তাঁর নাম অনুসারে নামকরণ হয়েছে এই উৎসবের।
অন্যদিকে, করবা চৌথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রানী বীরাবতীর দুঃখের কাহিনিও। লোকমুখে প্রচলিত এই কাহিনি অনুযায়ী, বীরাবতী ছিলেন সাত ভাইয়ের একমাত্র, এবং অত্যন্ত আদরের, বোন।
বাপের বাড়িতে করবা চৌথের ব্রত করেন বীরাবতী। কিন্তু উপবাসের ধকল সহ্য করতে না পেরে চাঁদ ওঠার আগেই ক্ষিদে-তেষ্টায় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। বোনের অবস্থা দেখে সাত ভাই মিলে একটি গোল আয়না গাছের ডালে ঝুলিয়ে নকল চাঁদ তৈরি করেন। চাঁদ উঠেছে মনে করে উপবাস ভাঙেন বীরাবতী। তবে খাবার মুখে তুলতেই তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়।
মহাভারতেও করবা চৌথের উল্লেখ রয়েছে। অর্জুন কোনও কাজে নীলগিরি পর্বতে গিয়েছিলেন। বাকি ভাইয়েরা ছিলেন না পাঞ্চালীর কাছে। পাঁচ স্বামীর মঙ্গল কামনায় শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে নাকি করবা চৌথ পালন করেছিলেন দ্রৌপদী।
উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারতে এর প্রচলন বেশী হলেও বর্তমানে অন্যান্য স্থানেও নিষ্ঠা করে পালন করা হয় এই উৎসব। বলা চলে হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়ালের জন্যে এই উৎসব আরও বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে সারা দেশে।
সূর্যোদয়ের আগে থেকে শুরু হয় উপবাস এবং সেটি চাঁদ না দেখা যাওয়া পর্যন্ত ভাঙা যায় না। তবে বলা হয় এই উপবাসের নিয়মগুলি বেশ কঠিন।
করভা চৌথ ২০২১ দিনক্ষণ
এই বছর করভা চৌথ পড়েছে ২৪ অক্টোবর, রবিবার। চতুর্থী তিথি থাকবে ২৪ অক্টোবর ভোর ৩.০১ মিনিট থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল ৫.৫৩ পর্যন্ত। পুজোর করার শুভ সময়, ২৪ অক্টোবর, সন্ধ্যা ৬.৫৫ থেকে ৮.৫১ পর্যন্ত। রাত ৮.১১ নাগাদ আকাশ মেঘলা না থাকলে চাঁদ দেখতে পাওয়ার যাবে। এই বছরের করভা চৌথের সময় রোহিণী নক্ষত্র থাকবে আকাশে, যেটি অত্যন্ত শুভ।