চিরাচরিত ঐতিহ্য ও প্রথা বজায় রেখে তারাপীঠে (Tarapith) উদযাপিত হল তারা মায়ের অর্বিভাব দিবস (Tara Maa Abirbhab Divas)। কথিত আছে শারদীয়ার শুক্লা চর্তুদশীতেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে তারা মায়ের দেখা পান বশিষ্ঠ মুনি। তবে সেই স্বপ্নে দেখা মূর্তি বহুদিন মাটির নিচে ছিল। পরে বণিক জয় দত্ত সওদাগর সেই মূর্তি তুলে মাকে মূল মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকেই এই দিনটিকে মায়ের আর্বিভাব দিবস হিসাবে ধরে নেওয়া হয়।
এই দিন মা তারাকে মূল মন্দিরের বাইরে বিশ্রামখানায় এনে স্নান করানোর পর রাজবেশে সাজিয়ে পুজো করা হয়। এই দিন দেবীর মুখ পশ্চিম দিকে করা থাকে৷ অবশ্য এর নেপথ্যও রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি।
প্রাচীন পুঁথিতে উল্লেখ আছে, বাংলার ১১০৮ সালে তথা ইংরাজীর ১৭০১ খৃষ্টাব্দে তান্ত্রিক ও পুরোহিতরা এই আবির্ভাব তিথিতে বিশ্রাম মন্দিরের পূর্ব দিকে মুখ করে পুজোয় বসতেন ৷ সেই সময় একবার মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন৷ তা দেখে তান্ত্রিক, সাধকরা রাজাকে পুজোয় বাধা দেন ৷ শুধু তাই নয়, তাঁর পুজো বন্ধও করে দেন৷ যার জেরে অভিমান করে রাজা চলে যান দ্বারকা নদীর পশ্চিম পাড়ে ৷ সেখানেই ঘট প্রতিষ্ঠা করে শুরু করেন পুজো ৷ পুজো শেষে ফিরে যান মলুটি গ্রামে ৷
সেই রাতেই তৎকালীন প্রধান তান্ত্রিক আনন্দনাথকে স্বপ্নে দেখা দেন তারা মা ৷ বলেন, রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত, সে অভিমান করে চলে গিয়েছে ৷ এবার থেকে আমার পুজো যেন পশ্চিম মুখে মলুটির কালীবাড়ির দিকে মুখ করেই করা হয়৷ তারপর থেকেই চলে আসছে এই প্রথা।
বছরের অন্যান্য দিন তারাপীঠ মন্দিরে ভোগ রান্না হয় ৷ কিন্তু রীতি অনুযায়ী, বছরের এই দিনটিতে কোনও ভোগ রান্না হয় না ৷ এই দিন মন্দিরের সমস্ত সেবাইত উপবাসে থাকবেন ৷
দিনের শেষে একবারই তারা মায়ের ভোগ দেওয়া হয় ৷ সন্ধ্যা আরতির পর খিচুড়ি ও পাঁচরকম ভাজা দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভাঙেন ভক্তরা।
আগে এই দিন উপলক্ষ্যে এলাকায় মেলা বসত। তবে এখন আর তা দেখা যায় না। পরিবর্তে সেই জায়গায় গজিয়ে উঠেছে ফুল ও পুজোর ডালার দোকান।
তারা মায়ের আবিভার্ব দিবস উপলক্ষ্যে এদিন প্রচুর ভক্ত ভিড় করেন মন্দিরে। তবে অনেকের মুখেই দেখা গেল না মাস্ক। কোথাও কোথাও সামাজিক দূরত্ব বিধি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠল।