Durgapuja 2025: পুজোর মরশুমে গোটা বাংলায় যখন মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গার আরাধনায় ব্যস্ত মানুষ, ঠিক তখন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট মহকুমার বোয়ালদা অঞ্চলের সরন গ্রাম চলেছে একেবারে অন্য পথে। এখানে দুর্গার পুজো হয় না। দেবী ধনলক্ষ্মীর আরাধনাতেই মেতে ওঠে গোটা গ্রাম।
৮০ বছরের রীতি, এখনও অটুট
গ্রামে ধনলক্ষ্মীর পুজো শুরু হয়েছিল প্রায় ৮০ বছর আগে, এক সময়ে চরম অর্থকষ্টে দিন কাটছিল এই কৃষিপ্রধান অঞ্চলের মানুষদের। সেই অভাব-অনটনের হাত থেকে রক্ষা পেতেই আশ্বিন সংক্রান্তির দিন ধনলক্ষ্মীর আরাধনার সূচনা করেছিলেন গ্রামবাসীরা। তখনকার বিশ্বাস ছিল, ধনলক্ষ্মীর কৃপাতেই গ্রামে আসবে সমৃদ্ধি।
আজও সেই বিশ্বাস অটুট। প্রতি বছর আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি তিথিতে আয়োজিত হয় এই পুজো। ধীরে ধীরে তা হয়ে উঠেছে গ্রামের সর্বজনীন উৎসব।
দুর্গার জায়গায় ধনলক্ষ্মী, তবে সঙ্গে রাম-সীতা-হনুমানও
পাঁচ দিন ধরে চলে এই পুজো। যদিও কেন্দ্রবিন্দুতে ধনলক্ষ্মী, তবুও পুজোয় থাকে রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, লব, কুশ এবং হনুমানের প্রতিমাও। গ্রামের মানুষ একে লক্ষ্মীপুজো নয়, ধনলক্ষ্মী ত্র্যহস্পর্শের উৎসব হিসেবেই দেখেন।
পুজোর রীতিতেও অন্য স্বাদ
পুজোর শুরু হয় পূর্ণ ঘট নিয়ে মহিলাদের মণ্ডপে আগমন দিয়ে। প্রত্যেকে বাড়ি থেকে চালভর্তি ঘট নিয়ে আসেন। সেখান থেকে শূন্য ঘট নিয়ে যান নদীতে, পূর্ণ জলভরা ঘট এনে দেবীর আবাহন করেন। প্রতিদিন হয় পুজো আর ভোগ। সন্ধ্যার পর বসে লক্ষ্মী-মঙ্গল গান। গানের ছন্দে, বিশ্বাসের সুরে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।
লোকসঙ্গীত, ভোগ আর পংক্তিভোজন, উৎসবের আবহ
এই পুজো শুধু ভক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এখানে মিশে রয়েছে গ্রামীণ লোকসংস্কৃতিও। প্রতিদিন রাতে হয় লোকসংগীতের আসর। পুজোর শেষ দিন, রবিবার, দেবীর বিসর্জনের আগে পুরো গ্রাম একসঙ্গে বসে পংক্তিভোজনে অংশ নেন। ওই দিনই সমাপ্তি ঘটে ধনলক্ষী পুজোর।
আজ আর অনটন নেই, আছে শুধু বিশ্বাস
গ্রামবাসীদের মতে, দেবীর কৃপায় আজ আর তাঁদের কোনও অভাব নেই। আগে যেখানে খাদ্যের টান পড়ত, আজ সেখানে উপচে পড়ে ভরপুরতা। গ্রাম যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনই বেড়েছে ধনলক্ষ্মীর প্রতি বিশ্বাস। সরনের মানুষরা তাই বলেন, "আমরা মা দুর্গাকে নয়, ধনলক্ষীকেই মা বলে ডাকি। আর তাতেই ভরসা পেয়েছি আমরা।"