শতাব্দী প্রাচীন রীতি মেনে বহু পুজোয় এখনও পশুবলি দেওয়া হয়। কোথায় তার পরিবর্তে আখ, চালকুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে। সব মিলিয়ে সন্ধিপুজোর (sandhi puja) সঙ্গে বলির একটা সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কেন সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেই বলতে পারবেন না।
বলি শব্দের অর্থ কী?
যজ্ঞে দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদ্য যা কিছু তাকে বলি বলা হয়। যজ্ঞের আগুনে ঝলসে তা প্রথমে দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হত, পরে তা প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করতেন মুণি-ঋষিরা। পশু থেকে কোনও ফল-সামগ্রী সব কিছু বলি হতে পারে। তবে জনমানসে ধারণা রয়েছে বলি মানেই পশুবলির কথা বলা হয়। দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে এই উৎসর্গ ছিল প্রতীকী। দুর্গাপুজোতেও প্রতীকী হিসাবেই এই বলি দেওয়ার রীতি প্রচলতি ছিল। এর সঙ্গে একটি কাহিনি জড়িত রয়েছে।
অষ্টমী এবং নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে স্বর্ণ ভূষণে সজ্জিতা হন দেবী দুর্গা। স্বর্ণ বর্ণ ধারণ করেন। মহিষাসুর বধের প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। তবে মহিষাসুর দেবীর এই অভীষ্ট সাধনে বাধা দান করতে তার দুই অনুচর চণ্ড এবং মুণ্ডকে দেবীকে একযোগে আক্রমণ করতে পাঠান। অত্যন্ত আকস্মিক ভাবে পিছন থেকে তারা দেবীকে আক্রমণ করেন। সে সময় দেবী ক্রোধে রক্তবর্ণা হয়ে ওঠেন। ধারণ করেন চামুণ্ডা রূপ। খড়্গের কোপে চণ্ড ও মুণ্ডের মুণ্ডচ্ছেদ করেন দেবী। এর সঙ্গেই অশুভ শক্তির বিনাশ হয়।
সে কারণেই চণ্ড-মুণ্ডের প্রতীক হিসাবে মনের অশুভ ভাবনা, পাশবিক প্রবৃত্তিকে দেবীর সামনের যজ্ঞে আগুনে ভস্ম করতে বলি দেওয়ার রীতি প্রচলিত। মহিষাসুরের প্রতীক হিসাবে বেশিরভাগ যজ্ঞে আগে মোষ বলি দেওয়ার রীতি ছিল। পরবর্তীতে তা অনেক ক্ষেত্রে পাঁঠাবলিতে রূপান্তরিত হয়। প্রাণীহত্যে অেকেই পছন্দ করেন না এবং দেশের আইন এবং পুজোর পবিত্রতার কথা মাথায় রেখে এখন চালকুমড়ো, আখ ইত্যাদি বলি দেওয়ার রীতি প্রচলিত হয়েছে।