
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ সাধারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনা হলেও, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং হিন্দুধর্মে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, শুভ কাজের জন্য সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ উভয়ই অশুভ বলে মনে করা হয়। এই সময়ে জীবনে মানসিক, আবেগিক এবং শারীরিক স্তরে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। ২০২৬ সালে কবে, কোন গ্রহণ হবে এবং রাশিচক্রের উপর তাদের প্রভাব কী পড়বে।
২০২৫ শেষ হতে চলল। সকলের কৌতূহল থাকে, কেমন কাটবে গোটা বছর। গ্রহ- নক্ষত্রের অবস্থান- গতিবিধি পরিবর্তনের উপর যেমন, সমস্ত রাশির জাতক- জাতিকাদের ভাল- মন্দ নির্ভর করে, সেরকমই সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ফলেও অনেক কিছু নির্ভর করে। ২০২৫-র মতো ২০২৬ সালেও মোট চারটি গ্রহণ হবে- দুটি সূর্যগ্রহণ ও দুটি চন্দ্রগ্রহণ।
প্রথম চন্দ্রগ্রহণ
২০২৬ সালের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ ৩ মার্চ, মঙ্গলবার হবে। এটি একটি আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। নয়াদিল্লি এবং ভারতের অনেক অংশে দেখা যাবে। এই গ্রহণ, এদিন সন্ধ্যায় প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী হবে। ফলে সূতক কাল বৈধ হবে।
কন্যা রাশির উপর প্রভাব
এই চন্দ্রগ্রহণ কন্যা রাশির জাতক-জাতিকাদের জীবনে আকস্মিক পরিবর্তন এবং আত্মবিশ্লেষণের ইঙ্গিত দেয়। চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। আবেগিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। পারিবারিক বিষয়গুলো মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা ব্যয়বহুল প্রমাণিত হতে পারে। এই সময়ে অতীতের কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং একটি সুষম দৈনন্দিন রুটিন বজায় রাখা উপকারী হবে।
প্রথম সূর্যগ্রহণ
বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার। এই দিনটি ফাল্গুন মাসের অমাবস্যা তিথি। এর অর্থ হল মহাশিবরাত্রির পরের দিন সূর্যগ্রহণ ঘটবে। এই গ্রহণ ভারতের কোথাও দেখা যাবে না। ফলে, এর কোনও ধর্মীয় তাৎপর্য, যেমন সূতককাল বৈধ হবে না।
শতভিষা নক্ষত্রে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ
এটি একটি বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ হবে। এই পরিস্থিতিতে সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবী একই সরলরেখায় থাকে, কিন্তু চাঁদ পৃথিবী থেকে কিছুটা দূরে থাকার কারণে সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলতে পারে না। ফলে সূর্যের চারপাশে একটি উজ্জ্বল বলয় দেখা যায়।
কুম্ভ রাশির উপর প্রভাব
এই গ্রহণ কুম্ভ রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য আত্মবিশ্লেষণ এবং বড় সিদ্ধান্তের সময় নিয়ে আসবে। এটি কর্মজীবনে পরিবর্তন বা নতুন দায়িত্বের ইঙ্গিত দিতে পারে। সামাজিক সম্পর্কগুলো দূরে সরে যেতে পারে বা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। মানসিক চাপ বাড়তে পারে, যার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন হবে। স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। এই সময়ে কোনও তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার পরিকল্পনাগুলো গোপন রাখুন।
দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহণ
২০২৬-র ২৮ আগস্ট, শুক্রবার আরও একটি চন্দ্রগ্রহণ হবে। তবে, এটি ভারতে দেখা যাবে না। ফলে কোনও সূতক কাল বৈধ হবে না।
২০২৬ সালের দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহণটি ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। এর প্রভাব মীন রাশিতে অনুভূত হবে। এই গ্রহণটি মীন রাশির জন্য সবচেয়ে প্রভাবশালী বলে মনে করা হচ্ছে। মানসিক বিভ্রান্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। আর্থিক বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সম্পর্কে মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। আধ্যাত্মিক প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সময়ে ধ্যান, প্রার্থনা এবং আত্মদর্শন মনের শান্তি এনে দিতে পারে।
দ্বিতীয় সূর্যগ্রহণ
২০২৬ সালের দ্বিতীয় সূর্যগ্রহণ ১২ আগস্ট, বুধবার হবে। এই দিনটি শ্রাবণ মাসের অমাবস্যা তিথি এবং হরিয়ালি অমাবস্যা উৎসব পালিত হবে। এই সূর্যগ্রহণটি ভারতের কোথাও দেখা যাবে না। ফলে সূতককাল বৈধ হবে না।
২০২৬ সালে চারটি গ্রহণের মধ্যে, শুধুমাত্র ৩ মার্চের চন্দ্রগ্রহণ ভারত থেকে দৃশ্যমান হবে। গ্রহণ হল একটি জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত ঘটনা, যা প্রতি বছর দেখা যায়। সনাতন ধর্মে, গ্রহণকে নিছক একটি জ্যোতির্বিদ্যাগত ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এটিকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত বলেই মনে করা হয়। গ্রহণ অশুভ বলে বিশ্বাস করেন অনেকে। সেই বিশ্বাস অনুযায়ী গ্রহণের সময়কালে, কোনও ধরনের শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ।
গ্রহণকালে কী করবেন এবং কী করবেন না?
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, গ্রহণকালকে অশান্ত শক্তি এবং নেতিবাচক প্রভাবের সময় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ে একজন ব্যক্তির মন এবং পরিবেশ বেশি সংবেদনশীল থাকে, তাই কিছু নিয়ম মেনে চলা উপকারী বলে মনে করা হয়।
গ্রহণকালে কী করবেন?
ধ্যান করুন, জপ করুন এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন করুন - গ্রহণকাল আধ্যাত্মিক অনুশীলনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে মনে করা হয়। এই সময়ে জপ এবং ধ্যান সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক গুণ বেশি ফলপ্রসূ হয়। গায়ত্রী মন্ত্র, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র বা আপনার প্রিয় দেবতার নাম জপ করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া মানসিক শান্তি বজায় রাখুন - আপনার মনকে শান্ত এবং ইতিবাচক রাখুন। রাগ, ভয় বা মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন, কারণ গ্রহণের সময় মানসিক অস্থিরতা দ্রুত প্রভাব ফেলতে পারে।