Advertisement

Gangasagar 2025: গঙ্গাসাগরে কপিল মুনি কে ছিলেন? মকর সংক্রান্তিতে পুণ্যস্নানে কী হয়? জেনে নিন

বেদ অনুযায়ী, সত্যযুগে অযোধ্যার রাজা ছিলেন সাগর। তিনি ছিলেন শ্রীরামচন্দ্রের ত্রয়োদশ পূর্বপুরুষ। রাজা সাগর ৯৯ বার অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন। অশ্বমেধ যজ্ঞে এক ঘোড়াকে বিশ্বজুড়ে যাত্রায় পাঠানো হত। ঘোড়াটি কোনও রাজ্যে বাধা ছাড়াই ফিরে এলেই রাজার কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত।

Gangasagar 2025: গঙ্গাসাগরের মাহাত্ম্য জেনে নিন।Gangasagar 2025: গঙ্গাসাগরের মাহাত্ম্য জেনে নিন।
সৌমিক মজুমদার
  • কলকাতা,
  • 13 Jan 2025,
  • अपडेटेड 4:13 PM IST

History of Gangasagar: বেদ অনুযায়ী, সত্যযুগে অযোধ্যার রাজা ছিলেন সাগর। তিনি ছিলেন শ্রীরামচন্দ্রের ত্রয়োদশ পূর্বপুরুষ। রাজা সাগর ৯৯ বার অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন। অশ্বমেধ যজ্ঞে এক ঘোড়াকে বিশ্বজুড়ে যাত্রায় পাঠানো হত। ঘোড়াটি কোনও রাজ্যে বাধা ছাড়াই ফিরে এলেই রাজার কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত।

৯৯ বার অশ্বেমেধের পর রাজা সাগর ১০০তম বার যজ্ঞের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। এদিকে সেটা দেখে স্বর্গের দেবরাজ ইন্দ্র রুষ্ট হন। কেন? কারণ তিনি নিজেও যে এই যজ্ঞ ১০০ বার করেছিলেন। তাঁর 'রেকর্ড' মর্ত্যলোকের একজন সাধারণ রাজা ভেঙে দেবেন? এ আবার হয় নাকি!

ঈর্ষান্বিত হয়ে ইন্দ্রদেব ঘোড়াটি চুরি করেন এবং এটি একটি গুহায় লুকিয়ে রাখেন। এদিকে এই গুহাতেই কপিল মুনি (বিষ্ণুর অবতার) ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। ফলে তাঁর অজান্তে গুহাতে যে ঘোড়া লুকিয়ে রাখা হল, তা তিনি টেরও পাননি।

এদিকে এভাবে হঠাৎ অশ্বমেধের ঘোড়া হারিয়ে যাওয়ায় রাজা সাগর অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।

সাগর রাজার ৬০,০০০ পুত্র ঘোড়ার সন্ধানে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েন। তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর অবশেষে, তাঁরা কপিল মুনির আশ্রমের কাছে ঘোঁড়াটি খুঁজে পান। আর সেটা পেয়ে তাঁরা কপিল মুনিকেই চোর ভেবে আক্রমণ করে বসেন। কপিল মুনির ধ্যান ভঙ্গ হয়। প্রবল ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপরেই তাঁদের অভিশাপ দেন। অভিশাপে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ভস্মীভূত হয়ে নরকে নিক্ষিপ্ত হন।

ছবিটি প্রতীকী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্পনায়।

এই ঘটনা জানার পর, সাগর রাজা কপিল মুনির কাছে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রথমে কপিল মুনি তাঁর শত  অনুরোধ-আর্জিও গ্রাহ্য করেননি। কিন্তু পরে বলেন, তাঁদের ভস্ম গঙ্গার পবিত্র জলে ধুয়ে গেলে তবেই তাঁদের(পুত্রদের) মোক্ষ লাভ হবে।

এরপর দুই প্রজন্ম ধরে গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার চেষ্টা করা হলেও, তা ব্যর্থ হয়। অবশেষে সাগর রাজার বংশধর ভগীরথ দেবতাদের তুষ্ট করেন। মহাদেবের কৃপায় গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনেন। গঙ্গার পবিত্র জল সাগরের পুত্রদের পাপ মুক্ত করে। 

সেই থেকেই কথিত, গঙ্গাসাগরে স্নান করলে তা মানুষকে মোক্ষ প্রদান করে।

পাখির চোখে গঙ্গাসাগর

গঙ্গাসাগর তীর্থের মাহাত্ম্য
গঙ্গাসাগর, যেখানে গঙ্গা সাগরে মিলিত হয়, সেই স্থানটি কপিল ঋষির আশ্রমের কাছেই অবস্থিত। মকর সংক্রান্তির সময় এখানে স্নান করা অত্যন্ত পবিত্র। হিন্দু মতে, এটি আত্মাকে পাপমুক্ত করে এবং মোক্ষ প্রদান করে।

Advertisement

বেদ অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণের সহোদর বলরামও গঙ্গাসাগরে এসেছিলেন। গৌরলীলায় ভগবান নিত্যানন্দ এই পবিত্র স্থানে ভ্রমণ করেছিলেন। শ্রীমদ্ভাগবত অনুযায়ী, কপিল ঋষি আজও এই স্থানেই রয়েছেন।

পঞ্চম শতাব্দীতে(খ্রিঃ) মহাকবি কালিদাসের লেখা রঘুবংশমেও গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রার উল্লেখ রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত কপালকুণ্ডলা-র প্রথম পরিচ্ছেদেই গঙ্গাসাগরে পৌঁছানোর বিপজ্জনক যাত্রার উল্লেখ রয়েছে-

'প্রায় দুই শত পঞ্চাশ বৎসর পূর্ব্বে এক দিন মাঘ মাসের রাত্রিশেষে একখানি যাত্রী নৌকা গঙ্গাসাগর হইতে প্রত্যাগমন করিতেছিল। পর্তুগিস্ ও অন্যান্য নাবিকদস্যুদের ভয়ে যাত্রীর নৌকা দলবদ্ধ হইয়া যাতায়াত করাই তৎকালের প্রথা ছিল; কিন্তু এই নৌকারোহীরা সঙ্গিহীন। তাহার কারণ এই যে, রাত্রিশেষে ঘোরতর কুঞ্ঝটিকা দিগন্ত ব্যাপ্ত করিয়াছিল; নাবিকেরা দিনিরূপণ করিতে না পারিয়া বহর হইতে দূরে পড়িয়াছিল। এক্ষণে কোন্ দিকে কোথায় যাইতেছে, তাহার কিছুই নিশ্চয়তা ছিল না।'

ফলে বুঝতেই পারছেন, এক সময় গঙ্গাসাগর যাত্রা ঠিক কতটা কঠিন ছিল। সেই কারণেই হয় তো বলা হত, 'সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার।' সময়ের সঙ্গে তা বদলেছে। এখন গঙ্গাসাগর যাওয়ার জন্য় শ'য়ে শ'য়ে জলযান। সেগুলি জিপিএস দিয়ে ট্র্যাক হয়। মুড়িগঙ্গার নাব্যতা বজায় রাখতে করা হয় ড্রেজিংও।

তরুণদেব ভট্টাচার্য রচিত 'গঙ্গাসাগর মেলা ও প্রাচীন ঐতিহ্য' বই অনুযায়ী, স্থায়ী মন্দিরটি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পরিণত মন্দিরের আকার আবির্ভূত হয়। সেই সময় থেকেই আরও তীর্থযাত্রীদের সমাগম বাড়তে শুরু করে গঙ্গাসাগরে। মেলার আকারও বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। 

Read more!
Advertisement
Advertisement