সামনেই নাগ পঞ্চমী (Nag Panchami)। শ্রাবণ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে এই পুজো করা হয়। এদিন নাগদেবতা (Nag Devta) ও মা মনসার পুজো (Ma Manasa) করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে নাগ দেবের পুজো করলে রাশিচক্রে রাহু (Rahu) ও কেতু (Ketu)সম্পর্কিত ত্রুটিগুলি দূর হয়। সাপের ভয় এবং সাপের কামড় থেকে মুক্তি পেতে নাগ পঞ্চমীতে পুজো করা হয়।
নাগ পঞ্চমীর দিনটির গুরুত্ব বলে যে নাগ পঞ্চমীর উপাসনা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন নাগদেব গোপন তার সম্পদ রক্ষা করেন। এই কারণে নাগপঞ্চমীর দিন পুজো করলে জীবনে ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধি লাভ করে। এই দিনে পুজো করলে মনের ইচ্ছে পূরণ হয়।
নাগ পঞ্চমী ২০২৩-এর দিনক্ষণ
* এই বছর নাগ পঞ্চমী পড়েছে ৭ জুলাই (বাংলায় ২১ আষাঢ়), শুক্রবার
* ৭ জুলাই ঘ ৮/১/৩০ থেকে ৮ জুলাই প্রাঃ ৫/৩৫/৫০ ৪২ অবধি থাকবে পঞ্চমী তিথি।
কালসর্প দোষ কী?
কালসর্প দোষ জন্মছকের এমন একটি অবস্থা, যেখানে সাতটি গ্রহ যেমন বৃহস্পতি, রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, শুক্র এবং শনি সকলেই রাহু এবং কেতুর ছায়ায় ঢাকা পড়ে অর্থাৎ এই সাতটি গ্রহ যখন এক পঙক্তিতে চলে আসে আর তারা ঢাকা পড়ে রাহু ও কেতুর ছায়ায়, তখন সৃষ্টি হয় পূর্ণ কালসর্প দোষ।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, কুণ্ডলীতে কালসর্প দোষ থাকলে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। কালসর্প দোষের নাম শুনলেই মানুষের মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু যদি আপনার কুণ্ডলীতে কাল সর্প দোষ থাকে তাহলে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। ছোট ছোট প্রতিকার করলেই আপনি এই দোষ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
কীভাবে বুঝবেন আপনি কাল সর্প দোষ দ্বারা প্রভাবিত?
জীবনে যদি অনেক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, বারবার একই কাজ হতে থাকে বা জ্যোতিষশাস্ত্রের ভাষায়, যদি রাহু ও কেতুর মধ্যে সমস্ত গ্রহ থাকে, তাহলে কাল সর্প দোষ রয়েছে বলে বোঝা যায়।
কালসর্প দোষের প্রভাব থাকলে কী করবেন না?
* পা ছড়িয়ে বসে খাবেন না।
* কারও মনে আঘাত দেবেন না।
* মিথ্যা কথা বলবেন না।
* খাওয়ার পর পেট স্পর্শ করবেন না।
কালসর্প দোষ এড়ানোর পদ্ধতি
* সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় কিছু খাবেন না। তবে জল খেতে পারেন।
* স্নানের সময় পূর্ব দিকে মুখ রাখুন।
* প্রতিদিন জল দিয়ে শিবের অভিষেক করুন এবং বেল পাতা নিবেদন করুন।
* শিবলিঙ্গে রুপোর সাপ নিবেদন করুন।
* শিবরাত্রিতে মহাদেবের মহাভিষেক করুন।
* লাল চন্দন, সুপারি, প্রবাল, কমলগট্টের উপর কলাব মুড়িয়ে পুজো-অর্চনার স্থানে রাখুন।
* জীবন থেকে দুঃখ দূর করুন, সম্পদ অর্জন করুন এবং আপনার স্বপ্নকে সত্যি করুন।
* সন্ধ্যায় শিবের সামনে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান।
* ঘরে ময়ূরের পালক রাখুন
* সকাল- সন্ধ্যা হনুমান চাল্লিসা পাঠ করুন।
* কোনও ধর্মীয় স্থান বা দরিদ্রকে জল ও খাবার দান করুন
* আপনার মোবাইল এবং ল্যাপটপে শেষনাগের উপর শুয়ে থাকা বিষ্ণুর ছবি রাখুন। কিংবা সেই ছবি আপনার বাড়িতে এমনভাবে রাখুন যাতে আপনি ঘরে প্রবেশ করার সময় দেখতে পান।
নাগ পঞ্চমীর গুরুত্ব
সনাতন ধর্মে সাপকে দেবতা রূপে পুজো করা করা হয়। ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণুও শেষনাগের উপর বসেন। এছাড়াও, দেবাদিদেব শিবও অলঙ্কার হিসেবে গলায় সাপ পরিধান করেন। ভগবদ গীতায় নয় ধরনের সর্পের কথা বলা হয়েছে, যাদের পুজো করা অত্যন্ত শুভ। পৌরাণিক মুনি- ঋষিরা অনেক ধরনের উপবাস ও পুজা করতেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে নাগপঞ্চমীর দিন ভগবান শিবের আরাধনা এবং রুদ্রবিষেকের পর নাগ দেবতার পুজো করলে কালসর্প দোষ জীবন থেকে শেষ হয় এবং রাহু ও কেতুর অশুভতা দূর হয়।