প্রীতম ব্যানার্জী
৫১ সতীপীঠের (Sati Pith) অন্যতম বীরভূমের বক্রেশ্বর (Bakreshwar)। ঋষি অষ্টাবক্র মুনির নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয় বক্রেশ্বর। সতীর ভ্রূ যুগলের মধ্যস্থল অর্থাৎ মন পড়েছিল এখানে। মা এখানে মহিষমর্দিনী দুর্গা। তাই দুর্গাপুজো এখানে ভীষণ ধুমধামের সঙ্গে হয়। পাশাপাশি দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনাও এখানে নিয়মিত ভাবে হয়ে থাকে। বছরভর ভক্তদের আনাগোনাও থাকে যথেষ্টই। কিন্তু করোনা কালে গোটা চিত্রটাই বদলে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে উৎসবেও। মন্দির কমিটির সম্পাদক রানা চৌধুরী জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতিতে এতবছরের নিয়ম বদলে এবার দুর্গাপুজোর নবমীতে প্রসাদ বিতরণ হয়েছে হাতে হাতে।
মন্দিরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অষ্টাবক্র মুনির কাহিনী। রানাবাবু জানাচ্ছেন কথিত আছে, পৌরাণিক যুগে একসময় কোহল মুনি বেদ পাঠ করছিলেন। সামনে বসে সেই বেদ পাঠ শুনছিলেন তাঁর সন্তাসম্ভাবা স্ত্রী গার্গী। সেসময় হঠাৎই গার্গীর গর্ভের সন্তান পেটের ভিতর থেকে কোহল মুনির বেদ পাঠের ভুল ধরে। তাতেই কোহল মুনি রেগে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর গর্ভের সন্তানকে অভিশাপ দেন। এরপর গার্গী সন্তান প্রসব করলে দেখা যায় তার ৮ অঙ্গ বাঁকা। সেই সন্তানই পরে হন অষ্টাবক্র মুনি। এরপর অষ্টাবক্র মুনি এই জায়গায় হাজার হাজার বছর তপস্যা করে বাবা মহাদেবের দর্শন পান। মহাদেবের নির্দেশ মতো আট জায়গার মাটি খুঁড়ে শরীরে লেপন করেন এবং দিব্যাঙ্গ রূপ পান অষ্টাবক্র মুনি। সেই থেকেই জায়গার নাম বক্রেশ্বর। আজও বক্রেশ্বরে ৮টি কুণ্ড আছে। সেই কুণ্ডগুলি আসলে উষ্ণ প্রস্রবণ। সেখানে স্নান করলে নানা রোগের থেকে মুক্তি মেলে বলেই বিশ্বাস মানুষের।
বিশেষ বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়াও সারাবছরই মোটামুটি ভক্তদের সমাবেশ হয় বক্রেশ্বরে। পাঁঠাবলিও হয়। তবে রানাবাবু জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতে ভক্ত তথা পর্যটকদের কার্যত দেখা নেই বললেই চলে। যদিও সংক্রমণ এড়াতে ইতিমধ্যেই বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তিনি। এক্ষেত্রে মন্দিরের প্রবেশ পথে সংয়ক্রিয় সেনসর স্যানিটাইজার মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বদল আনা হয়েছে প্রসাদ বিতরণের পদ্ধতিতেও। তবে এতকিছুর পরেও করোনা আতঙ্কে ভক্তের অভাব। যার জেরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পান্ডারা খুবই আর্থিক সংকটে রয়েছেন বলেই জানাচ্ছেন মন্দির কমিটির সম্পাদক।