করোনাকালে এবারেও টান পড়ল না হুগলির মাহেশের রথের রশিতে (Mahesh Rath Yatra)। গড়াল না রথের চাকা। তাই মন খারাপ মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে আপামর ভক্তকূল সকলের। মন্দির ট্রাস্টের সম্পাদক পিয়াল অধিকারী জানাচ্ছেন, এবছর মাহেশের রথ ৬২৫ বছরে পদার্পণ করল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রুখতেই তাঁরা গতবারের মতো এবারেও এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও পুজো হচ্ছে সমস্ত রীতিনীতি মেনে।
শোনা যায়, আজ থেকে ৬২৫ বছর আগে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী স্বামী ধ্রুবানন্দ মাহেশের এই রথযাত্রার প্রচলন করেন। তারপর থেকে তা আজও চলে আসছে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে শ্রীচৈতন্যদেব, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, মা সারদামণি থেকে শুরু করে বহু মনীষীর পদধূলি পড়েছিল এই মাহেশে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে মাহেশের রথের ঐহিত্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম।
মাহেশ তথা সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রভু শ্রী জগন্নাথই হলেন প্রধান আরাধ্য দেবতা। প্রভূর প্রতি অপার আস্থা ও বিশ্বাস তাঁদের। আর সেই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে নানারকম কাহিনীও শোনা যায় এখানকার মানুষের মুখে। যেমন এলাকার কেউ কেউ বলেন, স্থানীয় মানুষজন কখনও পুরীধামে যাত্রা করলে তার আগে অবশ্যই মাহেশের মন্দিরে প্রণাম করে যান। স্থানীয়দের কথায়, পুরী যেতে হলে আগে একবার মাহেশের প্রভুকে বলে আসতে হয় যে, 'তোমার ওই বাড়ি যাচ্ছি, যাত্রা সফল করো।' কারণ এমনটা না করলে নাকি যাত্রা সফল হয় না বলেই বিশ্বাস এলাকাবাসীর।
এমনই আরও কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে মাহেশের মন্দিরকে ঘিরে। নিয়মে আছে, পুরীর রথের যাত্রা শুরু না হলে নড়বে না মাহেশের রথ। মানুষের বিশ্বাস, পুরীর রথ ছাড়লে মাহেশের রথের ধ্বজায় বসে থাকা এক নীলকণ্ঠ পাখি অদভূতভাবে সেই খবর পায়। সেই নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গেলেই গড়ায় মাহেশের রথের চাকা। কেউ কেউ আবার বলেন, রথের চূড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলেই সেই নীলকণ্ঠ পাখিকে দেখা যায় না। তাকে দেখতে হয় মনের চোখ দিয়ে। এভাবেই যুগ ধরে বিশ্বাস ও সংস্কারের মেলবন্ধনে হয়ে চলেছে মাহেশের রথযাত্রা। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দু'বছর ধরে তা ব্যাহত। তবে ভক্তদের আশা প্রভুর কৃপায় আসছে বছর আবার ঘুরবে রথের চাকা। মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথদেব, সুভদ্রা ও বলভদ্র।