Advertisement

Ma Saraswati Devi: সরস্বতী কিন্তু শুধুই হিন্দুদের দেবী নন, যা জানা জরুরি

আসলে প্রাচীন ভারতে বিশেষ কোনও ধর্ম ছিল না। অর্থাৎ বর্তমান ভারতের মতো নানান ধর্মের আতিশয্য ছিল না। কয়েক শো বছর পর এই দেশে আচার ও উপাসনার মতভেদে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন এই তিন ধর্মের সূচনা হয়ে থাকে। এই তিন ধর্ম আলাদা হলেও দেখা গিয়েছে যে এই ধর্মগুলির মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম মিল রয়েছে। বিশেষ করে উপাসনা ও দেব-দেবীর ভাবনা-চিন্তার মধ্যে। তাই পরবর্তীকালে প্রাচীন হিন্দুধর্মের অনেক দেব-দেবীই বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মধ্যে ঢুকে পড়েন। দেবী সরস্বতী তাঁদেরই একজন।

সরস্বতী ঠাকুর
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 24 Jan 2023,
  • अपडेटेड 1:55 PM IST
  • দুদিন পরেই বাঙালীর ঘরের মেয়ে সরস্বতী পূজিত হবেন ঘরে ঘরে। আর তার আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই। স্কুল-কলেজে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। হিন্দু দেবী হিসাবেই পূজিত হন সরস্বতী।
  • কিন্তু জানেন কি সরস্বতী দেবীকে বৌদ্ধরাও উপাসনা করেন।
  • এই তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের একটি ধারা হল বজ্রযান। এখান থেকেই বৌদ্ধতান্ত্রিকেরা তাঁদের বজ্রযান গ্রন্থে সরস্বতীকে অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন।

দুদিন পরেই বাঙালীর ঘরের মেয়ে সরস্বতী পূজিত হবেন ঘরে ঘরে। আর তার আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই। স্কুল-কলেজে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। হিন্দু দেবী হিসাবেই পূজিত হন সরস্বতী। কিন্তু জানেন কি সরস্বতী দেবীকে বৌদ্ধরাও উপাসনা করেন। এর একটু গভীরে গিয়ে গোটা বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করলেই মূল বিষয়টি জানা যাবে। 

বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে ঢুকে পড়েন হিন্দু দেবদেবী
আসলে প্রাচীন ভারতে বিশেষ কোনও ধর্ম ছিল না। অর্থাৎ বর্তমান ভারতের মতো নানান ধর্মের আতিশয্য ছিল না। কয়েক শো বছর পর এই দেশে আচার ও উপাসনার মতভেদে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন এই তিন ধর্মের সূচনা হয়ে থাকে। এই তিন ধর্ম আলাদা হলেও দেখা গিয়েছে যে এই ধর্মগুলির মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম মিল রয়েছে। বিশেষ করে উপাসনা ও দেব-দেবীর ভাবনা-চিন্তার মধ্যে। তাই পরবর্তীকালে প্রাচীন হিন্দুধর্মের অনেক দেব-দেবীই বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মধ্যে ঢুকে পড়েন। দেবী সরস্বতী তাঁদেরই একজন। 

বজ্রযান গ্রন্থে সরস্বতীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়
শোনা যায়, গৌতম বুদ্ধের পরবর্তী যুগে সম্রাট অশোকের কারণে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়ে। সেরকমই পাল রাজারা মহাযান ধর্মাবলম্বী হলেও তাঁরা শৈব ধর্মকেও সমানভাবে মর্যাদা দিতেন। যার ফলে বৌদ্ধধর্মের ওপর শৈব ধর্মের প্রভাব স্ফষ্ট হতে শুরু করে এবং শুরু হয় তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের। এই তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের একটি ধারা হল বজ্রযান।  এখান থেকেই বৌদ্ধতান্ত্রিকেরা তাঁদের বজ্রযান গ্রন্থে সরস্বতীকে অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন। সেখানে সবার উপরে বোধিসত্ত্ব, তাঁর নীচেই মঞ্জুশ্রীর স্থান। মঞ্জুশ্রী দেবী নন, তাঁর পুরো নাম মঞ্জুনাথ বা মঞ্জুঘোষ—ইনি বাগ-দেবতা বা বিদ্যার অধিপতি, বাগীশ্বরী সরস্বতী তাঁর ‘শক্তি’। বৌদ্ধদের সাধনমালায় রূপভেদে সরস্বতীর পাঁচটি নাম পাওয়া যায়—মহাসরস্বতী, বজ্রবীণা সরস্বতী, বজ্রসারদা, আর্য সরস্বতী ও আর্যবজ্র সরস্বতী। তন্ত্রে এঁরা সবাই মাতৃকামূর্তি।  

Advertisement
বৌদ্ধ সরস্বতী দেবী

সরস্বতীর নাম পরিবর্তন হয়নি
বৌদ্ধধর্মে অনেক বৈদিক দেবদেবীর নাম পরিবর্তন করা হলেও সরস্বতীর নাম পরিবর্তন করা হয়নি। যদিও বৌদ্ধধর্ম ভারতের গণ্ডী ছেড়ে যখন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রসারিত হয়, তখন স্থান ভেদে দেবীর নাম পরিবর্তন হতে থাকে। তিব্বতে তাঁর নাম হয় ‘ইয়াং চেন মো’, সঙ্গীতের দেবী হিসাবে প্রাধান্য পেলে নাম হয় ‘পিওয়া কার্পো’। মঙ্গোলিয়ায় তিনি হলেন ‘কেলেয়িন উকিন তেগ্রি’। চীন দেশে নাম হল ‘মিয়াওয়িন মু’। জাপানে তাঁকে মিলিয়ে দেওয়া হল দেবী ‘বেঞ্জাইতেন’ বা ‘বেন্তেন’-এর সাথে। যদিও বৌদ্ধ সরস্বতীর সব মন্ত্রে- তা সে যে ভাষাতেই হোক- উচ্চারণ ‘সরস্বতী’ই করা হয়।

আরও পড়ুন: Saraswati Idol: বাড়িতে সরস্বতীর কেমন মূর্তি আনলে দেবীর কৃপাদৃষ্টি থাকে সংসারে, কেরিয়ারে উন্নতি হয়?

রূপভেদে সরস্বতী
দেবী মহাসরস্বতীর রূপকল্পনায় ভাবা হয়েছে যে, তাঁর আকার-প্রকার বারো বছর বয়সী মেয়েটির মতো, তাঁর গায়ের রঙ সাদা, বসন সাদা এবং তাঁর পদ্মের আসনও সাদা। গলায় মুক্তার হার। ডান হাতে বরাভয়, বাঁ হাতে সাদা পদ্ম। বজ্রবীণা সরস্বতীর রূর মহাসরস্বতীর মতোই, তবে এঁর দুই হাতে বীণা আছে। অন্যদিকে, বজ্রসারদার মুকুটে অর্ধচন্দ্র, ত্রিনয়ন, ডান হাতে পদ্ম, বাঁ হাতে পুস্তক। শ্বেতবর্ণা এই দেবী সাদাপদ্মের ওপর অধিষ্ঠিতা। আর্য সরস্বতী সাদা বসনে শোভিতা, শ্বেতবর্ণা। এঁর আকার যেন ষোল বছরের যুবতী মেয়েটির মতো। এঁর ডান হাতে লালপদ্ম, বাঁ-হাতে প্রজ্ঞাপারমিতা পুস্তক।


বৌদ্ধধর্মে খোঁজ পাওয়া যায় সরস্বতীর আরও রূপের
তবে এখানেই শেষ নয়, বৌদ্ধধর্মের সব শাখা মিলিয়ে দেখলে সরস্বতীর বহু রূপ খুঁজে পাওয়া যায়। 
-শ্বেত সরস্বতী তারা বা ইয়াং চেন মো দেবীর শান্ত রূপ। এইরূপে তিনি শিল্প, সাহিত্য ও জ্ঞানের দেবী।
-লাল সরস্বতী বা ইয়াং চেন মারমোর দেহের রং প্রবালের মত লাল। এটি দেবীর শক্তি রূপ। এক হাতে থাকে ইচ্ছা পুরণের রত্ন, অন্য হাতে জ্ঞান দর্পণ।
-নীল সরস্বতী বা শ্রীদেবী রূপের দেবী উগ্র। ডান হাতে থাকে বজ্রাঙ্কিত গদা, বাম হাতের মাথার খুলি। মাথায় জ্বলে জ্ঞানাগ্নি। 
-বজ্রবেতালি বা দোরজে রলাংমা সরস্বতীর ডাকিনী রূপ। এই রূপে সরস্বতীকে দেখা যায় মঞ্জুশ্রীর উগ্র রূপ বজ্রভৈরব বা যমন্তকের সঙ্গিনী হিসাবে।
-বজ্র সরস্বতী বা দোরজে ইয়ান চেমা দেবীর আরেক উগ্র রূপ। এখানে তাঁর তিনটি মুখ, মাঝেরটি লাল, দুই দিকে সাদা ও নীল। বাকি দেহের রং লাল। ইনি বুদ্ধি প্রদায়িনী দেবী।   

বৌদ্ধ সরস্বতী দেবী


ভারত থেকে একাধিক দেশে এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে দেবী সরস্বতী 
বৌদ্ধধর্ম প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সরস্বতীর উপাসনা ভারত থেকে চীন, জাপান, জাভা, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশের ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যায়। গড়ে ওঠে মন্দির। জাপানের সাতটি সৌভাগ্য দেবী ও দেবতার মধ্যে একজনের নাম ‘বেন-তেন’, ইনিই ভারতের সরস্বতী। এভাবেই বৌদ্ধধর্ম, তন্ত্র ও বাংলার ব্রতকথাধর্মী লোকগাথার মধ্য দিয়ে জাপান ও ভারতের বাইরে বৌদ্ধ দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল দেবী সরস্বতীর পুজো। অবশ্য ভিন্ন নামে। সেখানে তিনি বিদ্যা ও কলাশিল্পের আঙিনা ছুঁয়ে সৌভাগ্যের দেবী।

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement