পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাট শহরের কাছে অবস্থিত তারাপীঠ। তান্ত্রিক দেবী তারার মন্দির ও মন্দির- সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র। হিন্দুদের বিশ্বাস, এই মন্দির ও শ্মশান অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। আজ, ২১শে আশ্বিন, ১৪২৯ (ইং ৮ অক্টোবর ২০২২),শনিবার শুক্লা চতুর্দশীতে তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি। দিনভর বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছে তারাপীঠে। বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে মন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে সকাল থেকেই। চলছে কুমারী পুজো। কড়া নিরাপত্তা রাখা হয়েছে প্রশাসনের তরফে৷
তারা মায়ের আবির্ভাব তিথির রীতিনীতি
এদিন সূর্যোদয়ের আগে ঘুম ভাঙিয়ে ভোর তিনটে নাগাদ মায়ের বিগ্রহ গর্ভগৃহের বাইরে বিরামখানায় এনে পশ্চিম দিকে মুলুটি মায়ের মন্দিরের দিকে মুখ করে বসানো হয়। এরপর জীবিত কুন্ডের জল এনে স্নান করানোর পর রাজবেশ পরানো হয় মা তারাকে। দেবীর মঙ্গল আরতি পর্ব সম্পন্ন হলে, ভক্তরা মায়ের পুজো দেওয়ার সুযোগ পান। এদিন ভক্তরা এই একদিনই মাকে স্পর্শ করার সুযোগ পান। দিনভর বিরাম খানায় থাকার পর বিকালে আরতির পর মূল মন্দিরে নিয়ে আসা হয় মাকে। এরপর স্নান করিয়ে নবরূপে সাজানো হয় দেবীমূর্তিকে।
আরও পড়ুন: মকরে মার্গী হবে শনি! ৫ রাশির ধন- সম্পদ প্রাপ্তি ও উন্নতির যোগ
মা তারার ভোগ
রীতি অনুযায়ী এদিন মায়ের মধ্যাহ্নভোগ নিবেদিত হয় না। দিনভর মা ফল-মিষ্টিই খেয়ে থাকেন এবং মহাভোগ হয় রাত্রিবেলা। সকালে মঙ্গল আরতির পর লুচি, মিষ্টি,ফল দিয়ে শীতল ভোগ দেওয়া হয়। রাত্রে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা, মাছ, মাংস দিয়ে নিবেদন করা হয় মহাভোগ।
তারা মায়ের আবির্ভাবের অজানা কাহিনি
কথিত আছে তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেত শিমুল গাছের তলায় মা তারার শিলামূর্তি পেয়েছিলেন বশিষ্ঠ মুনি। এরপর সে শিলামূর্তির কথা কালের গর্ভে তলিয়ে যায়। জনশ্রুতি আছে এরপর পাল রাজাদের আমলে বণিক জয়দত্,ত মায়ের স্বপ্নাদেশে দেবীর শিলামূর্তি উদ্ধার করেন। তাঁর নির্দেশ মতো মন্দির নির্মাণ করে আশ্বিন মাসের শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে নাটোরের মহারানি পুণরায় মন্দির নির্মাণ করেন।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মী পুজোয় আপনার অর্থভাগ্য কেমন? জানুন সব রাশির আয়- ব্যয়
এই আবির্ভাব তিথিতে পূর্বে তান্ত্রিক, পুরোহিতরা দেবীমূর্তি বিরামখানায় এনে পূর্বমুখী বসিয়ে পুজো করতেন। কিন্তু বাংলা ১১০৮ সনে,(ইং ১৭০১ সালে) মায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত মুলুটির নানকার রাজা শ্রীরাখর চন্দ্র তারাপীঠে এসে মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন। তা দেখে তৎকালীন পুজক তান্ত্রিকেরা রাজার পুজোয় বাধা দেন এবং পুজো বন্ধ করে দেন। এতে রাজা অভিমান করে দ্বারকার পশ্চিম পাড়ে গিয়ে সেখানেই ঘট স্থাপন করে পুণরায় মা তারার পুজা করেন। পুজার শেষে মুলুটি গ্রামে প্রত্যাবর্তন করেন।
পশ্চিম মুখে তারা মায়ের পুজোর আয়োজন
সে রাতেই মা তারা তৎকালীন প্রধান পুরোহিত, তান্ত্রিক আনন্দনাথকে স্বপ্নাদেশে বলেন, রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত, তাঁর পুজোয় বাধা দেওয়ায় সে অভিমান করে চলে গিয়েছে। এবার থেকে এদিন আমার পুজো যেন পশ্চিম মুখে, মুলুটির কালীবাড়ির দিকে মুখ করেই করা হয়। এরপর থেকে এই আবির্ভাব তিথিতে মা তারার পুজো পশ্চিম মুখেই করা হয়।