Mahashivratri 2025: হিন্দু ধর্মমতে, শিবরাত্রি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বলে পরিচিত। কথিত রয়েছে, এদিন শিব ও পার্বতী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। একইসঙ্গে এই তিথিতে প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ প্রকট হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি পালিত হয়।
এই বছর মহাশিবরাত্রি পালিত হচ্ছে আজ অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি৷ এদিন একটি বিশেষ কাকতালীয় ঘটনা ঘটছে। বিশেষ কারণ প্রয়াগরাজে চলমান মহাকুম্ভের শেষ রাজকীয় স্নান মহাশিবরাত্রির দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই কারণে, মহাশিবরাত্রি উৎসব বহুগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মহাকুম্ভ ছাড়াও,এই বছর মহা শিবরাত্রিতে শ্রাবণ নক্ষত্রের একটি সংযোগের ঘটনা ঘটবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি, শ্রাবণ নক্ষত্র সকাল থেকে বিকেল ৫:০৮ টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই দিনে, মকর রাশিতে চন্দ্রের উপস্থিতিতে, সূর্য, বুধ এবং শনির সংযোগ কুম্ভ রাশিতে হবে। সূর্য এবং শনি পিতা ও পুত্র এবং সূর্য শনির রাশি কুম্ভ রাশিতে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে, বুদ্ধাদিত্য যোগ এবং ত্রিগ্রহী যোগ গঠিত হচ্ছে। এছাড়াও, মহাশিবরাত্রির দিনে শিব যোগ এবং পরিধ যোগের সংমিশ্রণ রয়েছে। এই যোগ সাফল্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। এই সময় পূজা করলে ইচ্ছা দ্রুত পূর্ণ হয় এবং উপবাসের ফল অনেক গুণ বেশি হয়।
শিব চতুর্দশী তিথি
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি শুরু। পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে তিথি শেষ। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে, বুধবার সকাল ৯টা ৪১ মিনিট ৮ সেকেন্ড থেকে শুরু তিথি। পরদিন সকাল ৮টা ২৯ মিনিট ৩১ সেকেন্ড তিথি শেষ। সুফল পেতে চাইলে এই সময়ের মধ্যে শিবের মাথায় জল ঢালতে হবে পুণ্যার্থীকে। মহাশিবরাত্রিতে রাতে পুজো করার ঐতিহ্য রয়েছে, তাই ২৬ফেব্রুয়ারি রাতে মহাদেবের পুজো করা হবে।
ভদ্রার ছায়া এবং জল উৎসর্গের শুভ সময়
জ্যোতিষশাস্ত্রের হিসাব অনুযায়ী, এবার ভদ্রার ছায়া মহাশিবরাত্রিতে থাকবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এবার ভদ্রার প্রভাব পাতালে এবং জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, পাতালে ভদ্রার কোনও প্রভাব পৃথিবীতে পড়বে না। অতএব, আপনি নির্দ্বিধায় শুভ সময়ে মহাদেবের পুজো করতে পারেন এবং শিবলিঙ্গে জল অর্পণ করতে পারেন।
মহাশিবরাত্রিতে দিনের প্রতিটি প্রহরে জলাভিষেকের শুভ সময় রয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ০৬.৪৭ থেকে ০৯.৪২ পর্যন্ত শিবলিঙ্গে জল অর্পণ করতে পারেন। আপনি সকাল ১১:০৬ টা থেকে দুপুর ১২:৩৫ টা পর্যন্ত শিবলিঙ্গে জল অর্পণ করতে পারেন। জলাভিষেকের শুভ সময় হল বিকেল ০৩.২৫ থেকে ০৬.০৮ পর্যন্ত। যেখানে শিবলিঙ্গের সাজসজ্জা রাত ০৮.৫৪ টা থেকে রাত ১২.০১ টা পর্যন্ত করা যাবে।
পুজোর শুভ সময়
শিবরাত্রিতে চার প্রহরের পুজোর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। সূর্যাস্তের পর থেকে সূর্যোদয়ের আগে পর্যন্ত সময়কে চার প্রহর বলা হয়। পুরাণ অনুযায়ী, শিবরাত্রির দিনে শিবলিঙ্গে বাস করেন মহাদেব। তাই এই বিশেষ দিনে শিবলিঙ্গের পুজো করা উচিত। আবার শাস্ত্র মতে, মহাশিবরাত্রিতে নিয়ম মেনে চার প্রহরের পুজো করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।
চার প্রহরের পুজোর নিয়ম
মহাশিবরাত্রিতে প্রথম প্রহরের পুজোয় জলধারা দিয়ে শিবের অভিষেক করা হয়। এই প্রহরে শিব পুজো করলে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু লাভ করা যায়। দ্বিতীয় প্রহরের পুজোর দই দিয়ে শিবের পুজোর নিয়ম রয়েছে। এই প্রহরের পুজোর মাধ্যমে ধন-সমৃদ্ধি লাভ করা যায়। মহাশিবরাত্রির দিনে তৃতীয় প্রহরের পুজোর সময় ঘি দিয়ে শিবের অভিষেক করতে হয়। এই নিয়ম মানলে মনস্কামনা পূরণ ও সন্তান সুখ লাভ করা যায়। চতুর্থ প্রহরের পুজোয় প্রথমে মধু ও তারপর জলধারা দিয়ে শিবের অভিষেক করা হয়। শাস্ত্র মতে এই প্রহরে পুজো করলে মোক্ষ ও শিবের অশেষ আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
মহাদেবের আরাধনা করার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল শিবলিঙ্গে জল ঢালা। শিবলিঙ্গে জল ঢেলে তাঁকে তুষ্ট করার চেষ্টা করেন শিবভক্তরা। তবে শিবলিঙ্গে জল ঢালার সঠিক নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম না মেনে শিবলিঙ্গে জল দিলে তাতে অত্যন্ত রুষ্ট হয়ে যেতে পারেন মহাদেব। জেনে নিন শিবলিঙ্গে জল ঢালার জন্য কোন কোন নিয়ম আপনাকে মানতেই হবে।