'ধর্ম যার যার, বড়মা সবার।' নৈহাটির বড়মা মন্দিরের বাইরে লেখা এই কথাগুলি যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে কালীপুজোয়। দূর-দূরান্ত থেকে শয়ে শয়ে মানুষ বড়মার আশীর্বাদ নিতে ভিড় জমাতে শুরু করেছে নৈহাটিতে। যদিও বন্ধ মন্দির। তবে মন্দিরের সামনে তৈরি হয়েছে চিরাচরিত ২১ ফুট উঁচু বড়মার মূর্তি। সেটিতেই হবে কালীপুজো। বড়মার পুজো দেখার জন্য নৈহাটি যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকলে, জেনে নিন সোমবার কখন হবে অঞ্জলি, কখন বিতরণ হবে ভোগ প্রসাদ।
নৈহাটির বড়মার পুজো শুরু হবে এদিন রাত ১২টা থেকে। অঞ্জলি হবে রাত ২টো নাগাদ। তবে সোমবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে বড়মার মূর্তির সামনে দণ্ডি কাটা। কাঠামো পুজোর পর থেকেই গঙ্গায় স্নান করে দণ্ডি কাটতে শুরু করেছেন ভক্তরা। এই দণ্ডি কাটার পর্ব চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ৫০ ভরি সোনা এবং ১৫০ কেজি রুপোর গয়নায় সেজে উঠেছেন বড়মা।
কোথায়-কখন মিলবে ভোগ?
বড়মার ভোগ প্রসাদ মিলবে সোমবার মধ্যরাত ৩টে থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত। পুজো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, জগবন্ধু মোড়ের কাছে পুকুর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত সুষমা আবাসনে বড়মার ভোগ প্রসাদ পাওয়া যাবে। মায়ের ভোগ হিসেবে থাকবে পাঁচরকম ভাজা, পাঁচমিশালি সব্জি, খিচুড়ি, পোলাও, আলুর দম, সাদাভাত, চাটনি, পায়েস এবং মিষ্টি। হবে হবে ৩ হাজার কেজি ভোগ। ১০০ কেজি ময়দার লুচি ভোগ হিসেবে দেওয়া হবে। তবে সন্দেশ নিতে গেলে আগে থেকে কুপন কেটে রাখতে হবে। ওই একই সময়ের মধ্যেই সন্দেশ পাওয়া যাবে। তবে সেটি নিতে গেলে যেতে হবে নৈহাটি নরেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (বয়েজ) ও মহেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে। অঞ্জলি শেষ হতেই স্কুলে সন্দেশ প্রসাদ বিতরণ হবে। যারা কুপন পাবেন, তারা এই প্রসাদ নিতে পারবেন।
পুজোর কাউন্টার
গত ১৩ অক্টোবর থেকে পুজো নেওয়ার ১টি কাউন্টার ও ১৭ অক্টোবর থেকে ৩টি পুজো গ্রহণের কাউন্টার খোলা হয়েছে। সোমবার পুজোর দিন ভক্তদের সুবিধার্থে থাকবে পুজো গ্রহণের ৪টি কাউন্টার।
পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর নৈহাটির বড়মার পুজোয় প্রায় ৭ লক্ষ দর্শনার্থী এসেছিলেন। মন্দির কমিটির কমিটির তথ্য বলছে, গত বছর শুধুমাত্র বড়মার কাছে দণ্ডি কেটেছিলেন কমপক্ষে ৬২ হাজার ভক্ত। এবার তার থেকেও আরও অনেক বেশি দর্শনার্থী আসবেন বলে মনে করছেন মন্দির কমিটির কর্তারা। বড়মার পুজোর ভিড় সামলাতে হাজির থাকবে প্রায় ৮০০ পুলিশকর্মী। এছাড়াও মন্দির কমিটির মোট ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ইতিমধ্যেই মন্দিরের আশপাশে বসে গিয়েছে ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’।
কোন পথে পৌঁছবেন মন্দিরে?
অরবিন্দ রোডে যেখানে বড়মার পুজো হয় সেখানে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরবিসি রোডেও যান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে অটো, টোটো এবং প্রাইভেট কার ছাড়া কোনও গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। ৮৫ নম্বর রুটের বাস কাঁচরাপাড়া থেকে হাজিনগর মাড়োয়ারি কল পর্যন্ত চলছে এবং অন্যদিকে নদিয়া মিলের সামনে থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত চলাচল করছে। ৭৩ এবং ডিএন ৫ রুটের বাস চলছে নৈহাটি বাস টার্মিনাস থেকে। নৈহাটি স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ রাখা হবে কালীপুজোর দিন। ১৯ অক্টোবর রবিবার থেকে নৈহাটি স্টেশনের এই প্ল্যাটফর্ম থেকে কোন ট্রেন ছাড়ছে না। যে সমস্ত দর্শনার্থীরা বড়মার মন্দিরে যেতে ট্রেনে চেপে নৈহাটি আসবেন, তাদের সাবওয়ে ব্যবহার করতে হবে। সাবওয়ে দিয়ে সোজা বেরিয়ে অরবিন্দ রোডে ঢুকতে হবে দর্শনার্থীদের। নৈহাটির প্ল্যাটফর্মের পূর্ব দিকে একটি বহু পুরনো ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে তবে সেটিও কালীপুজোর দিন বন্ধ থাকবে।
পুজো দেবেন অভিষেক
নৈহাটির বড়মায়ের পুজো দিতে এদিন দুপুর ৩টে নাগাদ পৌঁছতে পারেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, প্রথমেই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ পুজো দেবেন অরবিন্দ রোডের প্রায় ১০২ বছরের পুরনো সুউচ্চ ঘন কৃষ্ণবর্ণের বড়মাকে। তারপর পুজো দেবেন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কষ্টিপাথরের বড়মাকে। সে কারণে নিরাপত্তা আঁটসাঁট করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে, বড়মার মন্দিরটি নতুন করে স্থাপনের পর উদ্বোধনের সময় গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরের বছর ২০২৪ সালে বড়মার মন্দিরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।