দুর্গাপুজোর (Durga Puja) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সন্ধিপূজা। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ। এই সন্ধিক্ষণে তন্ত্রমতে করা হয় সন্ধিপূজা। ঠিক এই সময়েই দেবী দুর্গা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরের নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটি মনে রাখার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা করা হয়। চান্দ্রমাস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই সময়টি প্রতিবছরই পরিবর্তিত হতে থাকে।
পৌরাণিক কাহিনি
সন্ধিক্ষণের পিছনের পৌরাণিক কাহিনি অনেকটা এই রকম। দেবী দুর্গা এক অপরূপা সুন্দরী রূপে দুর্দমনীয় মহিষাসুরের সামনে আবির্ভূতা হন। সেই সময় দেবীর গাত্রবর্ণ বা গায়ের রঙ ছিল স্বর্ণাভ বা সোনালী এবং তিনি হলুদ শাড়ি পরে অবতীর্ণ হন। তাঁর দশ হাত সজ্জিত ছিল দশ ধরণের অস্ত্রে। যখন মহিষাসুরের সঙ্গে ভয়ানক যুদ্ধে তিনি ব্যস্ত, সেই সময় মহিষাসুরের দুই বন্ধু চণ্ড এবং মুণ্ড পিছন থেকে দেবীকে আক্রমণ করে। রণনীতি ভঙ্গ হওয়ায় দেবী অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন এবং রাগে তাঁর মুখ নীল হয়ে যায়। দেবী তাঁর তৃতীয় নয়ন উন্মীলিত করেন এবং চামুণ্ডা রূপ ধারণ করেন। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন। তাই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়।
সন্ধিপূজার সময় দেবীর পায়ে নিবেদিত হয় ১০৮ লাল পদ্ম। এই ১০৮টি পদ্মের পিছনেও আছে দু'টি পৌরাণিক কাহিনি। অসুর নিধনকালে দেবী দুর্গার সারা অঙ্গ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৮টি ক্ষত। ক্ষতগুলির অসহনীয় জ্বালা জুড়োবার জন্য দেবাদিদেব মহাদেব দুর্গাকে দেবীদহে স্নান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ।
দেবীদহে স্নান করার পর দেবী দুর্গার শরীরের সেই ১০৭টি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৭টি পদ্ম। কিন্তু একটি ক্ষত তখনও অবশিষ্ট ছিল । দেবী দুর্গাকে ১০৮তম ক্ষতের জ্বালায় কষ্ট পেতে দেখে মহাদেবের চোখ থেকে নির্গত হয়েছিল এক ফোঁটা অশ্রু । অশ্রুকণাটি গিয়ে পড়েছিল তাঁর ১০৮তম ক্ষতে। মিলিয়ে গিয়েছিল তাঁর শরীরের অবশিষ্ট ক্ষতটিও। দেবীদহে থেকে গিয়েছিল ১০৭ টি পদ্ম।
রামচন্দ্রও এই সন্ধিক্ষণে রাবণ বধ করেন
ত্রেতা যুগে লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করার জন্য সন্ধিপূজার শেষে শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পায়ে ১০৮টি পদ্ম উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন। তাই ভক্ত হনুমানকে পাঠিয়েছিলেন দেবীদহে। কিন্তু দেবীদহ থেকে ১০৭টি পদ্ম নিয়ে ফিরেছিলেন পবনপুত্র। কারণ দেবীদহে আর পদ্ম ছিল না। সুতরাং মহামায়ার পায়ে দেওয়ার জন্য একটি পদ্ম কম পড়েছিল । সন্ধিক্ষণ চলে যাওয়ার উপক্রম হলে শ্রীরামচন্দ্র ধনুর্বাণ দিয়ে নিজের নীল পদ্মের ন্যায় চক্ষু দুটির মধ্যে একটি উৎপাটন করে মায়ের পায়ে অর্পণ করতে চেয়েছিলেন ১০৮তম পদ্ম হিসেবে । চক্ষু উৎপাটনের মুহূর্তে অবতীর্ণ হয়েছিলেন দেবী দুর্গা । মায়ের বরে বলীয়ান শ্রীরামচন্দ্র এই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণেই রাবণ বধ করেছিলেন ।