Advertisement

Manasa Puja: রাত পোহালেই মনসা পুজো, জেনে নিন দেবীর আদিবৃত্তান্ত আর পুজোর বিধি

পুরাণ অনুসারে, মনসার হলেন শিবের স্বীকৃতকন্যা ও জরৎকারুর পত্নী। জরৎকারু মনসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মনসার মা চণ্ডী (শিবের স্ত্রী পার্বতী) তাঁকে ঘৃণা করতেন কিন্তু পরবর্তীতে মাতা চণ্ডী মনসাকে নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কোনো কোনো ধর্মগ্রন্থে আছে, শিব নয়, ঋষি কাশ্যপ হলেন মনসার পিতা। মনসাকে ভক্তবৎসল বলে বর্ণনা করা হলেও, যিনি তাঁর পূজা করতে অস্বীকার করেন, তাঁর প্রতি তিনি নির্দয়।

দেবী মনসা
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 16 Aug 2021,
  • अपडेटेड 1:32 PM IST
  • জন্ম-সংক্রান্ত কারণে মনসার পূর্ণ দেবীত্ব প্রথমে অস্বীকার করা হয়েছিল।
  • তাই মনসার উদ্দেশ্য ছিল দেবী হিসেবে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করা এবং একটি একনিষ্ঠ মানব ভক্তমণ্ডলী গড়ে তোলা।
  • তাঁর সঙ্গে মিশরীয় দেবী আইসিসের মিল রয়েছে।

মনসা (Devi Manasa) হলেন একজন লৌকিক হিন্দু দেবী। দেবী ভাগবত, পদ্মাপুরাণ-সহ আরও অনেক পুরাণে দেবী মনসার উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি সর্পদেবী। প্রধানত বাংলা অঞ্চল এবং উত্তর ও উত্তরপূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে তার পূজা প্রচলিত আছে। সর্পদংশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে, সর্পদংশনের প্রতিকার পেতে, প্রজনন ও ঐশ্বর্যলাভের উদ্দেশ্যে তার পুজো করা হয়। দেবীর ঘট স্থাপন করে পুজো করা হয়। মনসা নাগরাজ (সর্পরাজ) বাসুকীর ভগিনী এবং ঋষি জরৎকারুর (জগৎকারু) স্ত্রী। তাঁর অপর নামগুলি হল বিষহরি বা বিষহরা (বিষ ধ্বংসকারিণী), নিত্যা (চিরন্তনী) ও পদ্মাবতী।


দেবী মনসার উৎপত্তি

পুরাণ অনুসারে, মনসার হলেন শিবের স্বীকৃতকন্যা ও জরৎকারুর পত্নী। জরৎকারু মনসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মনসার মা চণ্ডী (শিবের স্ত্রী পার্বতী) তাঁকে ঘৃণা করতেন কিন্তু পরবর্তীতে মাতা চণ্ডী মনসাকে নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কোনো কোনো ধর্মগ্রন্থে আছে, শিব নয়, ঋষি কাশ্যপ হলেন মনসার পিতা। মনসাকে ভক্তবৎসল বলে বর্ণনা করা হলেও, যিনি তাঁর পূজা করতে অস্বীকার করেন, তাঁর প্রতি তিনি নির্দয়। জন্ম-সংক্রান্ত কারণে মনসার পূর্ণ দেবীত্ব প্রথমে অস্বীকার করা হয়েছিল। তাই মনসার উদ্দেশ্য ছিল দেবী হিসেবে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করা এবং একটি একনিষ্ঠ মানব ভক্তমণ্ডলী গড়ে তোলা। তাঁর সঙ্গে মিশরীয় দেবী আইসিসের মিল রয়েছে।

ঋগ্বেদের একটি রূপক ভাবনাও পরে দেবীত্বে মূর্তি পেয়েছিল। তিনি দুর্গম অরণ্যের দেবতা। পৌরাণিক সাহিত্যে ইনি দুর্গতের দেবতা দুর্গা (এবং পার্বতী, চণ্ডী) হয়েছেন। তারও পূর্বে ইনি সরস্বতী ও শ্রীর সঙ্গে অভিন্ন ছিলেন। পৌরাণিক যুগের আগেই সরস্বতী ও শ্রীর সঙ্গে বাস্তুনাগ দেবতার পূজা মিশে গিয়েছিল। তখন হতে মনসা নিজে নাগ না হয়েও সর্পরাজ্ঞী। সরস্বতী ও শ্রী দুই পৃথক দেবতায় (মনসা ও লক্ষ্মী) পরিণত হবার আগেই নাগ-পূজার সঙ্গে দেবীর যোগাযোগ ঘটে গিয়েছিল। পরে সরস্বতী ও শ্রী যখন ভাগাভাগি হল তখন মনসার ভাগে পড়ল সর্পনাগ আর লক্ষ্মীর ভাগে পড়ল হস্তীনাগ। মনসা ও লক্ষ্মীর মৌলিকতার অনেক প্রমাণ আছে। দুই জনেরই নামান্তর কমলা ও পদ্মা। পদ্মদলে মনসার উৎপত্তি আর কমলার আসন পদ্মে। লক্ষ্মীর উৎপত্তি সাগরে, মনসার উৎপত্তি হ্রদে।

Advertisement


বাংলায় মনসা পুজো

সাধারণত মনসার মূর্তি পূজা হয় না। সিজ বৃক্ষের শাখায়, ঘটে বা সর্প-অঙ্কিত ঝাঁপিতে মনসার পূজা হয়। তবে কোথাও কোথাও মনসার মূর্তিও পূজিত হয়। প্রধানত সর্পদংশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বা সর্পদংশনের প্রতিকার পেতে মনসার পূজা করা হয়। বাংলার বণিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও মনসাপূজা বিশেষ প্রচলিত। এর কারণ মনসামঙ্গল কাব্যের চাঁদ সদাগর, যিনি প্রথম মনসার পূজা করেছিলেন, তিনি ছিলেন একজন বণিক। এই কাব্যের নায়িকা বেহুলাও সাহা নামক এক শক্তিশালী বণিক সম্প্রদায়ের গৃহে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

বাংলা অঞ্চলেই মনসার পূজা সর্বাধিক জনপ্রিয়। এই অঞ্চলে অনেক মন্দিরেও বিধিপূর্বক মনসার পূজা হয়। বর্ষাকালে যখন সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়, তখন মনসার পূজা মহাসমারোহে হয়ে থাকে। নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের কাছে মনসা একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন দেবতা। তাঁরা বিবাহের সময় ও সন্তানকামনায় মনসার পূজা করেন। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে মনসার সঙ্গে নেতোর (যিনি নেতা, নেতিধোপানি, নেতলসুন্দরী ইত্যাদি নামেও পরিচিত) পূজাও করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে পুরো শ্রাবণ মাস মনসা পুজো হয়। পুজো উপলক্ষে হয় পালা গান ‘সয়লা’। এই পালার বিষয় হল — পদ্মপুরাণ বা মনসা মঙ্গল। সারা রাত ধরে গায়ক দোয়ারপি-সহ পালা আকারে ‘সয়লা’ গান গায়। পুরুলিয়ায় মনসা পূজায় হাঁস বলি দেওয়া হয়। রাঢবঙ্গ বাঁকুড়ায় জ্যেষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে দশহরা ব্রত পালন করে মনসা পূজা করা হয়।তখন এখানে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। মনসা পুজার অঙ্গ হল অরন্ধন। রাঢ়ে চৈতন্যদেবের সময়ে মনসাকে মা দূর্গার এক রূপ মনে করা হত। তাই কোনও কোনও জায়গায় পুজোয় বলি দেয়া হত। আজও অনেক পুজোয় পাঁঠা বলি হয়।


মনসা দেবীর পুজো

আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার পর যে পঞ্চমী তিথি (শ্রাবণ) তাকে নাগপঞ্চমী বলে। নাগপঞ্চমীতে উঠানে সিজগাছ স্থাপন করে মনসা পুজো করা হয়। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা পঞ্চমী পর্যন্ত পুজো করার বিধান আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একমাস যাবত্‍ পুজো করা হয়। শুধুমাত্র শেষ দিনে পুরোহিত দ্বারা পুজো করা হয়। উল্লেখ্য, নাগকুল কশ্যপমুনির জাত যা সাধারণ সাপ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন যেমন, অনন্ত, শেষনাগ, বাসুকি প্রভৃতি উদাহরণস্বরূপ বিষ্ণুর মস্তকের উপরে থাকেন শেষনাগ।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement