রথের দিন জগন্নাথদেবের রথের রশি ছোঁয়া। অনেক ভক্তের কাছেই এটি জীবনের পরম প্রাপ্তি। প্রতিবছর পুরী, মাহেশ বা কলকাতার ইসকনের রথে লক্ষ লক্ষ রথের রশি টানেন।
কিন্তু রথের রশি স্পর্শের জন্য ভক্তদের এই আকুলতা কেন? ধর্মীয় বিশ্বাস, শ্রীজগন্নাথের রথের রশি স্পর্শ করলেই মানুষ পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পায়। অর্থাৎ জীবনের জাগতিক কষ্ট, পুনর্জন্ম আর সহ্য করতে হয় না।
ইন্দ্রনীলময় পুরাণ বলছে, রথের রশি স্পর্শ করা মানেই জন্মমৃত্যুর বন্ধন ছিন্ন হওয়া। শ্রীজগন্নাথ নিজে এই রথে বিরাজ করেন বামন অবতারে। সেই রথ টানার সৌভাগ্য যাঁদের হয়, তাঁদের জীবন হয়ে ওঠে পুণ্যসিক্ত।
সূতসংহিতা বলে— 'রথে তু বামনাং দৃষ্টা, পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে'। অর্থাৎ যিনি বামন অবতারের রথ দর্শন করেন, তাঁর আর পুনর্জন্ম হয় না।
শুধু রশি টানাই নয়, অনেকেই রথের রশির সুতো বাড়ি নিয়ে যান। সেই সুতো মাদুলি করে গলায় বা হাতে পরেন। সন্তানদেরও পরিয়ে দেন। এটি নাকি সমস্ত অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করে। কারও দুঃস্বপ্ন হলে, তাঁর বালিশের নিচে রথের রশির সুতো রাখারও রেওয়াজ আছে।
এই রশির মাহাত্ম্য নিয়ে কপিল সংহিতায় বলা হয়েছে—
'গুণ্ডিচাখ্যং মহাযাত্রা যে পশ্যন্তি মুদনিতাঃ/
সর্বপাপ বিনির্মুক্তা তে যান্তি ভুবন মম।'
অর্থাৎ, গুণ্ডিচা যাত্রার দিনে যিনি রথ দর্শন করেন, তিনি সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে কৃষ্ণলোকে চলে যান।
শ্রীচৈতন্যদেবের অনুগামী সনাতন গোস্বামী একবার চলন্ত রথের চাকার তলায় প্রাণ দিতে চেয়েছিলেন। কারণ হিসেবে বলেছিলেন, এতে কৃষ্ণপ্রাপ্তি হবে। কিন্তু মহাপ্রভু নিজে তাঁকে বুঝিয়েছিলেন যে, দেহত্যাগ নয়, ভক্তি ও ভজনেই কৃষ্ণকে পাওয়া যায়।
রথের রশি ছুঁয়ে যে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়, সেকথাও স্কন্দপুরাণ ও বামদেব সংহিতাতে উল্লেখ আছে। তাই রথের দিন আপনার এলাকায় ছোট রথযাত্রা থাকলে সেখানেও অংশ নিতে পারেন। এর সঙ্গে জড়িয়ে বহু পূণ্যের বিশ্বাস।
দ্রষ্টব্য: রাশি, জ্যোতিষ, ধর্ম সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি লোকমতভিত্তিক। প্রকাশক-সম্পাদক এগুলির সত্যতা নিশ্চিত করে না।