শীতকাল মানেই বাঙালিরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন পৌষ পার্বণের জন্য। মনে করা হয় পৌষমাস শস্যের মাস। আর এমন মাসই যেন সারা বছর থাকে, তাই তাকে আগলে রাখা হয়। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে প্রচলিত কথা ‘পৌষ মাস লক্ষ্মীমাস’ কে সামনে রেখেই আয়োজিত হয় পৌষপার্বণ। নতুন ধান উঠে এই সময় তা কৃষকদের আঙিনা সাজিয়ে দেয়। মাটি নিকিয়ে দেওয়া গ্রাম বাংলার বহু ঘরের উঠোনে এই সময় ঢেঁকি সিঁদুরে রাঙানো হয়। আর গ্রাম থেকে শহর অধিকাংশ বাড়িতেই হয় পিঠে বানানোর তোড়জোড়।
কবে পৌষ পার্বণ
মকর সংক্রান্তি, যা বাংলায় পৌষ পার্বণ বা পৌষ সংক্রান্তি নামে পরিচিত। পৌষ মাসের শেষদিনে এই উৎসবটি পালন করা হয়। নতুন বছর ২০২৪-এ পৌষ পার্বণ পালন করা হবে ১৫ জানুয়ারিতে। বাংলায় এইদিন বিভিন্ন ধরনের পিঠে তৈরি করা হয়, যা বাংলার মিষ্টি ধান, ময়দা, নারকেল, দুধ এবং খেজুর গুড় দিয়ে বানানো হয়।
শুভ মুহূর্ত
সংক্রান্তির অমৃত মুহূর্ত
সকাল ৭টা ১০ থেকে সন্ধ্যে ৫টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত
সংক্রান্তির মহা মুহূর্ত
সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।
পৌষ পার্বণের তাৎপর্য
হেমন্ত কালে ধান ঘরে প্রথম তোলার প্রতীক হিসেবে কয়েকটি পাকা ধানের শিষ ঘরে এনে কিছু নির্দিষ্ট আচরণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বাঙালি মনে করেন যে, এই দিনটিতে লক্ষী স্বয়ং নতুন শস্যের সঙ্গে সাথে গৃহস্থের বাড়িতে প্রবেশ করে। তাছাড়া পূর্বপুরুষদের মনে করে নতুন শস্যের বিভিন্ন রকমের পিঠা এবং খাবার তৈরি করে তাঁদেরকে নিবেদন করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে পুজো-পার্বণতো রয়েছেই। ধান বা চাল কে লক্ষ্মী হিসেবে মনে করা হয়। তাই চালের গুঁড়ো দিয়ে লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ, আলপনা দিয়ে দেবী লক্ষীকে ঘরে আহ্বান জানানো হয়, যাতে ঘরে ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি পায়।
পৌষের রীতি
পৌষ পার্বণের রীতি মেনে বাঙালি ঘরে ঘরে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠে-পুলি। পাটিসাপটা, দুধপুলি, সরু চাকলি, রসবড়া, গোকুল পিঠে থেকে শুরু করে তালিকাটা বিশাল বড়। তবে বহু বর্ষীয়ান মহিলার মতে সরা পিঠেই এই পৌষে বানানো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের। সরায় ধানের তুষ রেখে পাট কাঠির আগুনে তা পুড়িয়ে সরা তৈরি করতে হয়। নতুন চালের গুঁড়োতে তৈরি হয় সরা পিঠে। প্রথম পিঠে দেওয়া হয় গরুকে। তারপর অন্যদের।