দুর্গাপুজোর সময় প্রতি বছরই একটি প্রশ্ন অনেকের মনে জাগে কলাবউ আসলে কে? অনেকে মনে করেন তিনি গণেশের স্ত্রী। কিন্তু বাস্তবে কলাবউ হলেন নবপত্রিকা, যা দুর্গাপূজার এক অতি প্রাচীন রীতি এবং দেবী দুর্গার শক্তির প্রতীক। নয়টি ভিন্ন গাছের সমন্বয়ে তৈরি হয় এই নবপত্রিকা, যার মধ্যে প্রধান হল কদলী বা কলা গাছ। তাই একে কলাবউ বলা হয়।
নবপত্রিকা কী?
নবপত্রিকা শব্দের অর্থই হল নয়টি গাছের সমন্বয়। এগুলো হল, কদলী (কলা), কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মানকচু এবং ধান। প্রতিটি গাছকেই দেবী দুর্গার ভিন্ন রূপ হিসাবে পূজিত করা হয়। শাস্ত্র মতে, এরা প্রকৃতির প্রতীক এবং শস্যের ঐশ্বর্যকে দেবীর শক্তি রূপে আরাধনা করা হয়।
গণেশের পাশে কেন রাখা হয়?
দুর্গাপূজার সকালে নবপত্রিকাকে গঙ্গা বা পুকুরে স্নান করানো হয়। এরপর কলাগাছটিকে লাল শাড়ি পরিয়ে, ঘোমটা দিয়ে বধূর সাজে সাজানো হয়। তাকে গণেশের পাশে বসানো হয়, ফলে অনেকেই ভুল করে ভাবেন কলাবউ গণেশের পত্নী। কিন্তু সত্যি হল তিনি আসলে দেবী দুর্গারই একটি প্রতীক, গণেশের সঙ্গিনী নন।
নবপত্রিকার গুরুত্ব
দুর্গাপূজার মূল পর্ব শুরু হয় নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমেই। তাই একে অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এই প্রাচীন রীতি শুধু দেবী পূজারই অংশ নয়, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের প্রতীকও বটে। নবপত্রিকা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দেবী দুর্গা কেবল মহিষাসুরমর্দিনী নন, তিনি প্রকৃতির শক্তি, শস্য ও জীবনের রক্ষকও।
তাই এ বার দুর্গাপুজোয় কলাবউ দেখে মনে রাখবেন, তিনি কোনও দেবতার স্ত্রী নন, বরং প্রকৃতির শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক নবপত্রিকা।