Inflation Hits Vegetables: টমেটো, আদা, কপি, লঙ্কা, কিসের দাম কম? যেখানেই হাত দেবেন, সেখানেই আগুন। সবজি বাজারে পৌঁছাতেই সবার কন্ঠে এখন একটাই বক্তব্য, কী কিনব? সবজির যা দাম? তাতে কিছুতে হাত দিতেই ভয়। এরপর এক কেজির জায়গায় আধ কেজি, আধ কেজির জায়গায় ২০০ গ্রাম কিনে বাড়ি ফিরে আসছেন। খদ্দেররা বা বড় শহরের লোকেরা কখনও এটা ভাবেন না যে, সবজি শেষ এত দাম কেন? পাওয়া যাচ্ছে না, তা নয়, কোনওটারই ক্রাইসিস নেই, অথচ দাম চড়চড় করে বেড়ে যাচ্ছে।
বেমরশুমে সবজি মণ্ডিতে আসে সবজি
আসলে এখন যে যে সবজিগুলি দামী, সেগুলি সোজাসুজি ক্ষেত থেকে সবজিমন্ডিতে পৌঁছায় না। কারণ বর্ষার মরশুমে খুব কম সবজি ঠিকঠাক ফলন হয়। বিশেষ করে টমেটো, কপি, কাঁচা লঙ্কার মতো সবজি, জুলাই মাসে কখনও সবজিখেতে দেখতেই পাবেন না। প্রশ্ন উঠবে যে, সবজিগুলি কোথা থেকে আসছে? আসলে বর্ষার মরশুমের জন্য আগে থেকেই প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ সবজি কোল্ড স্টোরেজে রাখা থাকে। এরপর চাহিদা অনুসারে এটি ধীরে ধীরে বিভিন্ন বাজারে পৌঁছায়।
মরশুমি সবজিকে স্টোর করা হয়
যে মরশুমের যে সবজিগুলি খেত থেকে তুলে বাজারে পাঠানো হয়, বাজারেও সহজেই পাওয়া যায়, সেটিও সামান্য দামে। সেই সময়ই সবজিগুলি বড় কোল্ড স্টোরেজে রেখে দেওয়া হয়। কারণ কোল্ড স্টোরেজে বহু মাস পর্যন্ত সবজি তাজা থাকে। বিশেষ করে কপি, পেঁয়াজ, টমেটো, আলু, আদা এগুলি রাখা থাকে। কারণ কোনও সময় বিপর্যয় বা কোনও বিপদ তৈরি হলে এগুলি বাজারে পাঠানো যেতে পারে। আলু, পিঁয়াজ, লঙ্কা ছাড়া কোনও রান্নাই করা যায় না। তাই এগুলিকে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। যদিও বেশিরভাগ কৃষকেরা পিঁয়াজ এবং আলুর জন্য কোল্ড স্টোরেজের ব্যবহার করেন, কিন্তু এখন মরশুমি সবজিও বড় পরিমাণে কোল্ড স্টোরেজে রাখা হচ্ছে। টমেটো সবচেয়ে বেশি দেড় থেকে দুমাস পর্যন্ত রাখা সম্ভব।
মরশুমি সব্জি শেষ হলে বাজারে এন্ট্রি নেয় কোল্ড স্টোরেজের সব্জি
বাজারে এখন প্রায় সব সবজিই বিনা সিজনে পাওয়া যায়। অর্থাৎ সারা বছরই মেলে। জানিয়ে দিই যে, সব সবজি সাধারণ লোকেদের হাতের বাইরে চলে যায়। এর বড় কারণ হলো আসলে দিল্লি সহ বড় শহরগুলির মার্কেটে আপনাকে প্রত্যেকদিন এই ধরণের সবজি আপনি পেয়ে যাবেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা কখনওই দেখবেন না বাজারে নেই, অথচ মরশুম শেষ হয়ে গিয়েছে ছয় মাস আগেই। সেগুলি কোল্ড স্টোরেজে রেখে ধীরে ধীরে বাজারে ছাড়া হয়, দাম বাড়তে থাকে। যা এক সময় আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। আবার যখন কিছুদিন পর সেগুলোর যে মেয়াদ শেষ হতে থাকে, বাধ্য হয়েই এই সবজিগুলির দাম কমে যায়।
অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বহু সবজি কিনতে পারেন না, এগুলির জন্য সরকার দায়ী থাকে না, যারা কোল্ড স্টোরেজে রেখে কালোবাজারি করেন, তারাই এর জন্য দায়ী। তাই অনেক সময় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দাম বেঁধে দিলে, সেই সবজি কম দামে বিক্রি হয়ে যায়। ফলে বিক্রেতারা ক্ষতি করে কোনও সবজি বেচেন না। তাঁদের লাভের পরিমাণটা কমিয়ে দিতে হয়।
সিজনের সবজির একটি তালিকা
গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে জুন)- লাউ, করলা, বেগুন, ক্যাপসিকাম, ঢেঁড়শ, মটর, পালং, টমেটো, পেঁয়াজ।
বর্ষাকাল (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর)- লাউ, শিম, করলা, বেগুন, কাঁকড়ি ঢেঁড়শ, পালং।
শরৎকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি, মটর, মূলা, পালং, শালগম, ওলকপি।
শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)- ব্রকোলি, পালং, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, সরষা শাক, মটর, পালং, শালগম, পেঁয়াজ।
স্টোরেজ ট্রান্সপোর্টেশন এবং মূল্যবৃদ্ধির খেলা
আসলে এই সমস্ত সবজি বিনা সিজনে বাজারে নামানোর জন্য বহু ব্যবসায়ী স্টক জমা করতে শুরু করে এবং তার সঙ্গে পরিবহণ খরচের হিসেব ধরে এর দাম ঠিক করে। এর পুরো খেলা সহজ ভাষায় সবজির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী এবং পাইকাররা যে কোনও সিজনে যে কোনও সবজি নামাতে পারে।
সাধারণভাবে কোনও স্টোরেজে এক কুইন্টাল পিঁয়াজ এবং আলুর স্টোর করতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া ট্রান্সপোর্টেশন খরচও ধরে নিলে আলাদা আলাদা রাজ্যে আলাদা আলাদা হয়। এই পুরো প্রসেস মিলিয়ে খরচ জুড়ে তার সঙ্গে লাভের অংশ ধরে সবজি বাজারে নামানো হয়। বেগুন, লাউ, কপি সমেত বিভিন্ন সবজি কোল্ড স্টোরেজে স্টক করে রাখা হয়। অন্যান্য মরশুমের শুরুতে পর্যন্ত এটি বাজারে ছাড়া হয়। তারপর ঐ সবজির আসল বর্ষণ শুরু হলে দাম কমতে থাকে এবং এগুলিও বাজারে কম দামে বিক্রি হয়।