দোকানে গেলেন। পছন্দ করলেন পছন্দের স্মার্টফোন। দাম লাখখানেক টাকা। অথচ পকেট গড়ের মাঠ! ইতস্তত করে দোকানদারকে বললেন, 'এটা তো বাজেটের বাইরে'। দোকানদারের আশ্বস্তবাণী,'মশাই ঘাবড়াচ্ছেন কেন! কিনে নিন। No-cost EMI, zero interest তো আছেই'। অনেকেই এখন এভাবেই ফোন থেকে এসি, ফ্রিজ কিনে ফেলছেন। কিন্তু সত্যিই কি ধারে ঘি খেলেও সুদ এক পয়সাও লাগে না! নাকি গোটাটাই ধোঁকা! তাহলে পড়ে ফেলুন পুরো প্রতিবেদন।
স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, গৃহস্থালির যে কোনও কাজের জিনিস, এমনকি পোশাকও এখন 'নো কস্ট ইএমআই, জিরো ইন্টারেস্টে' দিচ্ছে খুচরো দোকানদার থেকে ইকমার্স প্ল্যাটফর্ম। মূল লক্ষ্য, শুরুতেই পুরো টাকা দেওয়ার সরকার নেই। বরং মাসে মাসে অল্প অল্প করে মিটিয়ে দেওয়া হয়। সহজ ভাষায়, ধার। কিন্তু ধার করলে তো সুদ দিতে হয়। অন্তত এতদিন এটাই জানতেন। কিন্তু এই 'No Interest' নিয়েই বিভ্রান্তি। তাহলে কি এভাবে কিনে সত্যিই লাভ? আরও স্পষ্ট করে বললে,'আমার কি লাভ?'
No-cost EMI, zero interest বিষয়টি একদম সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন রোইনেট সলিউশনের এমডি, প্রতিষ্ঠাতা সমীর মাথুর। তাঁর সাফ কথা, No Cost EMI মানে একদম সুদহীন নয়। পণ্যের দাম বা অন্যান্য খরচের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয় সুদ। সাধারণভাবে ইএমআই-তে থাকে দু'টি উপাদান, আসল এবং সুদ।
তিন উপায়ে ব্যাঙ্ক ও খুচরো বিক্রেতারা নিজেদের 'লাভ' তুলে ফেলেন। সেটা খালি চোখে বোঝা যায় না। তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাথুর।
ছাড় থাকে না: যে কোনও পণ্যে এক লপ্তে কিনলে একটা ছাড় পাওয়া যায়। সেই ছাড় ধারে কিনলে পেলে না। এভাবে বিক্রেতারা পুষিয়ে নেন।
ফি এবং GST: ধার নিয়ে পণ্য কিনতে গেলে একটা প্রসেসিং ফি দিতে হয় গ্রাহকরা। ওর মধ্যেই ধরা থাকে সুদ।
বর্ধিত দাম: ইএমআই দিয়ে কেনার ক্ষেত্রে পণ্যের যে দাম তার বেশি নেন বিক্রেতারা। এভাবেই সুদ চলে আসে ঘুরপথে।
তবে No Cost EMI কোনও আর্থিক দুর্নীতি বা প্রতারণা নয়। এটা একটা ভ্রম বলা যেতে পারে। আর ছোট ছোট কিস্তিতে শোধ দিতে হওয়ায় গ্রাহকরাও লাভবান হন। এক লপ্তে না দিয়ে ওই টাকা অন্যত্র খাটিয়ে লাভ করতে পারেন।
ব্যাঙ্ক এবং খুচরাো বিক্রেতারা কীভাবে লাভ করেন?
খুচরা বিক্রেতার লাভ: বেশি দামের জিনিস গ্রাহককে বিক্রি করতে পারেন। পণ্যের দাম বেশি হলে লাভের হারও বেশি হয়। তাছাড়া বাড়ে বিক্রির সংখ্যাও। ধরুন, এক লাখের জিনিস ইএমআই ছাড়া ৫টা বিক্রি হয়। সেখানে ইএমআই দিয়ে ১৫টা। এবার বুঝে নিন লাভের অঙ্কটা।
ব্যাঙ্ক/এনবিএফসির লাভ:‘No Cost’ হলেও ব্যাঙ্কগুলি নেয় প্রসেসিং ফি, সুদের উপর জিএসটি, খেলাপি জরিমানা। বছরে অনাদায়ে জরিমানার হার ২৪ শতাংশেরও বেশি হয়।