Pulses Price: শীঘ্রই দেশে উৎসবের মরসুম শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের ৫টি রাজ্যে নির্বাচনও হতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উৎসবের মৌসুমে মূল্যস্ফীতি (Inflation) নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর আওতায় বাসমতি চাল, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র সরকার একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে। কেন্দ্র চায় না রপ্তানির প্রভাবে দেশের বাজারে কোনও খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি থাকুক। কারণ, ঘাটতির ফলে দেশের বাজারে এগুলির দাম বাড়তে পারে।
ভারত-কানাডা সম্পর্কের অবনতি
এই সিরিজে, ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অড়হর এবং উরাদের স্টক সীমা (Pulse Stock Limit Extend) ৩০ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন কানাডা ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা (Canada India Tension) ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। আর কানাডা থেকে সবচেয়ে বেশি ডাল আমদানি করে ভারত। তাই ভারত-কানাডার সম্পর্কের অবনতির ফলে ডালের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
দুই দেশের মধ্যে কিছু বাণিজ্য চুক্তি ছিল, এটিও আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ভারত কানাডা থেকে সর্বাধিক মসুর ডাল এবং এমওপি (মুরিয়েট অফ পটাশ) সার আমদানি করে। এখন পর্যন্ত উভয় দেশ পারস্পরিক গুরুত্বের অনেক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করছে। আগে অনুমান করা হয়েছিল, কানাডা এবং ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২২ সালে প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। ২০২৩ সালে, কানাডা এবং ভারতের মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাণিজ্য হয়েছিল।
ভারত-কানাডা কৃষি সম্পর্কিত বাণিজ্য
কৃষি সম্পর্কিত বাণিজ্যে ভারত কানাডা থেকে সর্বাধিক মসুর ডাল এবং এমওপি (মুরিয়েট অফ পটাশ) সার আমদানি করে। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে চলা বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে কানাডা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। মসুর ডাল এবং এমওপি সার আমদানি না করার কারণে ডালের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং সারের ঘাটতির কারণে দেশে চাষের ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আগামী দিনে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য কেন্দ্র এই দুটি পণ্য সরবরাহ করবে। কিন্তু তার জন্য ঠিক কী ধরনের নীতি, কৌশল অবলম্বন করবে কেন্দ্র? কারণ উল্লেখিত দুই পণ্যের আরও রপ্তানিকারক বিশ্ববাজারে রয়েছে।
দেশে ডালের পর্যাপ্ত জোগান কীভাবে?
ভারত প্রতি বছর কানাডা থেকে গড়ে ৪-৫ লক্ষ টন ডাল আমদানি করে। ভারতে ডালের বার্ষিক প্রয়োজন ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টন। তবে ২০২০-’২১ সালে ডালের আমদানি সর্বোচ্চ ১১.১৬ লক্ষ টন ছুঁয়েছিল। ২০২১-’২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬.৬৭ লক্ষ টনে। ২০২১-২২ সালে দেশে মসুর ডালের উৎপাদন ছিল ১২.৬৯ লক্ষ টন। ২০২২-২৩ সালে দেশে ডালের উৎপাদন হয়েছে ১৫.৯৯ লাখ টন। এভাবে দেশে মোট ডালের উৎপাদন ও আমদানির কারণে বর্তমানে মসুর ডালের ঘাটতি খুব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভারতের কাছে কানাডার বিকল্প হিসেবে অস্ট্রেলিয়া রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ডালের বড় উৎস এটি একটি বড় রপ্তানিকারক দেশও। ভারত ২০২২-’২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩.৫ লক্ষ টন ডাল আমদানি করেছিল। শুল্ক অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকান ডালের আমদানিও বাড়তে পারে। এদিকে দেশে ডালের চাষ শুরু হবে আগামী মাস থেকে। ফলে দেশের বার্ষিক প্রয়োজন মেটাতে যে পরিমাণ ডাল লাগে, তা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্র।
পটাসিয়াম ক্লোরাইডের আমদানির ক্ষেত্রে কানাডার বিকল্প কী?
কানাডা হল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পটাসিয়াম ক্লোরাইড সরবরাহকারী দেশ। বছরে প্রায় ১৩ মিলিয়ন টন পটাসিয়াম ক্লোরাইড রপ্তানি করে কানাডা। ভারত সবচেয়ে বেশি পটাসিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে। দেশে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ লাখ টন পটাসিয়াম ক্লোরাইডের প্রয়োজন হয়। ভারত এর জন্য কানাডা, ইজরায়েল, জর্ডান, বেলারুশ, রাশিয়া থেকে পটাসিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে। যদি কানাডা ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে পটাসিয়াম ক্লোরাইড সরবরাহ না করে, সে ক্ষেত্রেও ভারতের খুব সমস্যা হবে না। কারণ, ভারত পটাসিয়াম ক্লোরাইডের জন্য শুধুমাত্র কানাডার উপর নির্ভরশীল নয়। ভারত ইজরায়েল, জর্ডান, বেলারুশ, তুর্কমেনিস্তান এবং রাশিয়া থেকেও পটাসিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে। তাই ভারতের কাছে পটাসিয়াম ক্লোরাইডের জন্য একাধিক বিকল্প রয়েছে। যদিও কানাডাকে বাদ দিয়ে নতুন করে ব্যবস্থা করতে কিছুটা দেরি হতে পারে। তবে বড় কোনও সমস্যা হবে না বলেই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।