৯ অক্টোবর। দেবীপক্ষে প্রয়াত রতন টাটা। এমনই একটা দেবীপক্ষে তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছিল বাংলার। তারিখটা, ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর। চতুর্থীতে রতন টাটা ভগ্ন হৃদয়ে ঘোষণা করেছিলেন, সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানা হচ্ছে না। চলে গিয়েছিলেন গুজরাতের সানন্দে। দিন কয়েক আগেই চলে গিয়েছেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যিনি চেয়েছিলেন বাংলায় গাড়ি তৈরির কারখানা হোক। এবার চলে গেলেন রতন টাটা। সেই সঙ্গে টাটা ও সিঙ্গুর পর্বের একটা অধ্যায়ও শেষ হল।
২০০৬ সালে বিরাট জয় পেয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বাংলার আকাশে-বাতাসে তখন 'ব্র্যান্ড বুদ্ধ'। স্লোগান- 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ'। শিল্পখরা রাজ্যে কর্মসংস্থানের জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন বুদ্ধদেব। সেজন্য দরকার বড় বড় কারখানা। ক্ষমতায় এসেই সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের আগেই টাটার সঙ্গে কথা পাকা হয়ে গিয়েছিল বুদ্ধদেবের। ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ মে। ১৮ মে ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ওই দিন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে বুদ্ধদেব বলেছিলেন,'সন্ধায় পারলে রাইটার্সে একজন অতিথি আসছেন'। সাংবাদিকদের শত জোরাজুরিতেও সেই অতিথির নাম বলেননি। বলেছিলেন,'সাসপেন্স থাক'। সন্ধ্যায় রাইটার্সে এলেন রতন টাটা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করলেন, রতন টাটা বাংলায় কারখানা করতে চান। জানা গেল, সিঙ্গুরেই তৈরি হবে গাড়ি কারখানা।
শুরু হল সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ। তাতেই বাঁধল গোল। বহু কৃষকই জমি দিতে অস্বীকার করলেন। তাঁদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মতলায় অনশনে বসলেন নেত্রী। দুপক্ষের মধ্যে চলল দড়ি টানাটানি। মমতার রাজনৈতিক আন্দোলনেও দমে যাননি টাটা। বলেছিলেন,'কপালে বন্দুক ঠেকালেও সিঙ্গুর ছেড়ে যাব না'। কিন্তু বাংলার ভাগ্যে গাড়ি কারখানা ছিল না। ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর তাজ বেঙ্গলে রতন টাটা সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন, সিঙ্গুরে কারখানা হচ্ছে না। সেই সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন bangla.aajtak.in-এর সম্পাদক কেশবানন্দ ধর দুবে। সেই দিনের কথা মনে করতে গিয়ে তিনি বললেন,'রতন টাটা বলেছিলেন, ব্যাড এম ছেড়ে গুড এম বেছে নিলেন'।
এই 'ব্যাড এম' বলতে রতন টাটা সেদিনের বিরোধী নেত্রী মমতাকে বুঝিয়েছিলেন। আর 'গুড এম' বলতে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের সানন্দে ন্যানো কারখানা তৈরি করলেন রতন টাটা। সেদিনের গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর সেদিনের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। দেবীপক্ষে দেশ রতন হারাল। কিন্তু বাংলা 'রতন' হারিয়েছিল সেই ২০০৮ সালেই।