অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে ফের একবার বড় পদক্ষেপ নিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI)। আজ অর্থাত্ শুক্রবার মনেটারি পলিসি কমিটির (MPC) তিনদিনের বৈঠক শেষে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঘোষণা করল, রেপো রেট কমিয়ে ৫.৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগের হার ছিল ৬ শতাংশ। ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর এই সিদ্ধান্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই নিয়ে পরপর তিনবার রেপো রেট কমাল RBI। এপ্রিল মাসে ২৫ বেসিস পয়েন্ট এবং তারও আগে ফেব্রুয়ারিতে আরও একবার সুদের হার কমানো হয়েছিল। অর্থাৎ চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক নীতির মূল লক্ষ্য হল, ঋণগ্রহণ সহজ করে অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি করা।
রেপো রেট কী?
রেপো রেট হল সেই সুদের হার, যার ভিত্তিতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়। রেপো রেট যত কমবে, ব্যাঙ্কগুলি তত কম খরচে টাকা পাবে। ফলে তারাও গ্রাহকদের কম সুদে ঋণ দিতে পারবে। এর ফলে হাউস লোন, গাড়ি বা পার্সোনাল লোন নেওয়া আরও সহজ হয়ে ওঠে।
RBI কেন রেপো রেট কমাল?
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা জানান, 'দেশের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত রয়েছে, অথচ শিল্পোৎপাদন ও বাজারে চাহিদা এখনও প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছোয়নি। এই অবস্থায় সুদের হার কমিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে আরও ঋণ দেওয়ার অনুপ্রেরণা দেওয়া হল।' সরকার চায়, সাধারণ মানুষ বেশি করে খরচ করুক, বিনিয়োগ বাড়ুক এবং বাজারে নগদের প্রবাহ বাড়ুক। রেপো রেট কমিয়ে সেই উদ্দেশ্যেই এগোচ্ছে RBI।
সাধারণ মানুষের জন্য কী সুবিধা?
এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন সেই সমস্ত মানুষ যাঁদের চলতি হারে হোম লোন বা অন্যান্য ঋণ রয়েছে। কারণ, রেপো রেট কমলে তাঁদের মাসিক কিস্তির (EMI) পরিমাণ কমে যেতে পারে। আবার যাঁরা নতুন করে ঋণ নিতে চান, তাঁরাও আগের তুলনায় কম সুদে টাকা পেতে পারেন।
কোন দিকটা চিন্তার?
যদিও সুদের হার কমানো স্বস্তির খবর, তবুও একে ঘিরে কিছু আশঙ্কাও রয়েছে। একটানা রেপো রেট কমালে বাজারে অতিরিক্ত টাকা ঘোরে, যা পরবর্তীতে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও ব্যাঙ্কগুলির ঋণ ফেরত পাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়, যদি ঋণগ্রহীতারা ঋণ শোধে ব্যর্থ হন।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। উৎপাদন, পরিষেবা, রফতানি—সব খাতেই মিশ্র ছবি। এই অবস্থায় RBI-এর রেপো রেট কমানো সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, স্টার্টআপ থেকে রিয়েল এস্টেট—সকলের পক্ষেই স্বস্তির বার্তা বয়ে আনবে।
দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে RBI ধাপে ধাপে রেপো রেট কমিয়ে চলেছে, যাতে ঋণ নিতে উৎসাহ বাড়ে ও চাহিদা তৈরি হয়। এখন দেখার, এই নীতি বাজারে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় কি না।