সপ্তাহের প্রথম দিনেই কালো সোমবারের ছবি ভারতীয় শেয়ারবাজারে। এশিয়ার শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতনের জেরে আজ অর্থাত্ সোমবার সকালে ভারতের শেয়ারবাজার খুলতেই ভেঙে পড়ল সেনসেক্স ও নিফটি। দিনের শুরুতেই সেনসেক্স ৩০০০ পয়েন্ট এবং নিফটি ১০০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে যায়। বাজার খোলার আগে থেকেই প্রি-ওপেন সেশনে ৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন দেখা যায় দুই সূচকে। দিনের শুরুতেই সেনসেক্স ৩০০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে গিয়ে নেমে আসে ৭২,৩২৯-এ। অন্যদিকে, নিফটিও পড়ে যায় ৯৭১ পয়েন্ট, যার ফলে সূচক নেমে আসে ২১,৯৩২-এ।
আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক মন্দাভাব
এই ধসের প্রভাবে বিনিয়োগকারীদের মোট সম্পদের পরিমাণ এক লাফে ১৯ লক্ষ কোটি টাকা কমে গিয়েছে। গত সেশনে যেখানে বাজার মূলধন ছিল ৪০৩.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা, আজ তা নেমে এসেছে ৩৮৩.৯৫ লক্ষ কোটি টাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধসের অন্যতম কারণ হল আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক মন্দাভাব। হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক প্রায় ৯% এবং জাপানের নিক্কেই সূচক প্রায় ৮% পড়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে নিফটিতেও ৯০০ পয়েন্টের বেশি পতন দেখা যায়। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ভারতের বাজারে।
কোন কোন শেয়ারে সবচেয়ে বেশি পতন?
বাজার খুলতেই শীর্ষ সংস্থাগুলির শেয়ার মূল্য বড়সড় পতনের মুখে পড়ে। টাটা মোটরস, মঝগাঁও ডক, রিলায়েন্স, ইনফোসিস, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক – সব শেয়ারে বড় পতন লক্ষ করা যায়। বিনিয়োগকারীদের মুখে চিন্তার ছায়া। বহু মানুষ প্রাথমিক স্তরে শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন, যার ফলে আরও ধস নামে বাজারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, এইচসিএল টেক, এল অ্যান্ড টি, টেক মাহিন্দ্রা ও ইনফোসিসের মতো বড় সংস্থাগুলি। এই শেয়ারগুলির পতন হয়েছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
আগেই মিলেছিল সতর্কবার্তা
গত সপ্তাহেই শেয়ারবাজারে দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল। শুক্রবার সেনসেক্স ৯৩০ পয়েন্ট এবং নিফটি ৩৪৫ পয়েন্ট পড়ে বন্ধ হয়। শীর্ষ ১০টি সংস্থার মধ্যে ৯টি সংস্থার মিলিত মার্কেট ক্যাপ প্রায় ২.৯৪ লক্ষ কোটি টাকা কমে যায়। বিশেষ করে রিলায়েন্স, টিসিএস-এর মতো কোম্পানিগুলোও এই ধাক্কা সামলাতে পারেনি।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক আর্থিক অনিশ্চয়তা, মন্দাভাব, এবং মার্কিন অর্থনীতির কিছু নেতিবাচক ইঙ্গিতের ফলে বিশ্বব্যাপী এই ধস দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা, মার্কিন ফেডের সুদের হার নিয়ে জল্পনা, এবং চিনের অর্থনৈতিক দুর্বলতাও অন্যতম কারণ। তারা মনে করছেন, এখনই আতঙ্কিত হয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরাই শ্রেয়। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে থাকলে লাভের সুযোগ রয়েছে বলেই অনেকে মত প্রকাশ করছেন।
কী করবেন আপনি?
এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেলিং (ভয়ে শেয়ার বিক্রি করা) থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং, বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ভালো সংস্থার শেয়ারে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বিঃ দ্রঃ-- শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।