শেয়ার বাজার যেন আজ একেবারে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিল। এমন ধস শেষ কবে দেখা গেছে, মনে করতে সময় লাগবে। সেনসেক্স আর নিফটি দু'টোই একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল ধস আর চোখের পলকে বিনিয়োগকারীদের ১৪ লক্ষ কোটি টাকা উধাও! এই পরিস্থিতিতে এখন বড় প্রশ্ন – এবার বিনিয়োগকারীরা কী করবেন?
কী ঘটল আজ শেয়ার বাজারে?
সোমবার সকালটা যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে এল। BSE সেনসেক্স ৩,৯৩৯.৬৮ পয়েন্ট পড়ে গিয়ে ৭১,৪২৫.০১-এ ঠেকেছিল দিনের ভিতরে। Nifty ৯৭৩.৫৫ পয়েন্ট পড়ে ২১,৯৩০.৯০-এ পৌঁছেছিল। শেষে কিছুটা সামলে সেনসেক্স ২,২২৬ পয়েন্ট পড়ে ৭১,১৩৭, আর নিফটি ৭৪২ পয়েন্ট পড়ে ২২,১৬২-এ বন্ধ হয়।
বাজারে এই পতনের ফলে BSE-এর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন একসময় ৪০৩ লক্ষ কোটি থেকে নেমে যায় ৩৮৩ লক্ষ কোটি-তে। মানে এক ঝটকায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার ধস। শেষমেশ ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়ায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকায়।
এই পতনের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। একটু দেখে নেওয়া যাক —
১. ট্রাম্পের ট্যারিফ বোমা
ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন এবং ২ এপ্রিল এক ঘোষণা করেন – ভারত, চীনসহ একাধিক দেশের ওপর নতুন করে ট্যারিফ বসাবেন। এই ঘোষণায় আমেরিকার বাজারে ভয়াবহ পতন দেখা দেয়, যার রেশ এসে লাগে ভারতীয় বাজারেও।
২. এশিয়ান মার্কেটেও ধস
জাপানের নিক্কেই ৮% নিচে, হংকং-এর হ্যাংসেং ৯.৪% পড়ে গিয়েছে, সাউথ কোরিয়া ৬% নেমেছে — গোটা এশিয়া যেন একসঙ্গে বেচাকেনায় নেমেছে।
৩. এফআইআইয়ের টাকা তুলে নেওয়া
বহিরাগত বিনিয়োগকারীরা (FIIs) গত কয়েক মাস ধরে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এর ফলে বাজারে তারল্য কমে গিয়ে প্রেসার বাড়ছে।
৪. টাকার পতন
৭ এপ্রিল রুপির দাম পড়ে গিয়ে ৮৫.৭৪৫০-তে নেমে এসেছে। ডলারের তুলনায় এটা এক বড় পতন। এরসঙ্গে রয়েছে ক্রুড অয়েলের দামেও ধস, যার প্রভাব পড়ছে পুরো ইকোনমিতে।
তাহলে এখন বিনিয়োগকারীরা কী করবেন?
প্যানিক করবেন না। এক্সপার্টদের মতে, এই ধস আরও কিছুদিন চলতে পারে। তবে এখন যেটা করতে পারেন "ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ" – এখন নতুন করে শেয়ার কেনা মানে ঝুঁকি নেওয়া। ফান্ডামেন্টালি স্ট্রং স্টক থাকলে বিক্রি করবেন না।
SIP বন্ধ করবেন না – কারণ লং টার্মে এগুলোই লাভ দেবে।
এখন যদি কেউ নিরাপদ বিনিয়োগ খুঁজছেন, তাহলে ব্যাঙ্ক FD, সোনা বা সরকারি যোজনা (যেমন PPF, NSC) ভালো বিকল্প হতে পারে। বাজারে এমন দিন আসেই। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু না ভেবে কিছু করাও বিপজ্জনক। বাজারে অভিজ্ঞতা আর ধৈর্যই শেষ পর্যন্ত জয়ী করে। আর হ্যাঁ, বিনিয়োগ করার আগে নিজের ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার-এর সঙ্গে একবার আলোচনা করে নেবেন — এটা ভীষণ দরকারি।