টুভালু প্রশান্ত মহাসাগরের একটি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ আঘাতের মুখোমুখি হচ্ছে এটি। সমগ্র দ্বীপটি সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। যার কারণে এখন বিশ্বের প্রথম পরিকল্পিত জাতীয় অভিবাসন শুরু হচ্ছে। ১৬ জুন থেকে শুরু হওয়া ভিসা আবেদনে ৫,১৫৭ জন (প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা) অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়ের পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। আবেদনপত্র ১৮ জুলাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর টুভালু থেকে ২৮০ জন অস্ট্রেলিয়া যেতে পারবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের কারণে এই সব ঘটছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব
টুভালু, যা অস্ট্রেলিয়া এবং হাওয়াইয়ের মধ্যে অবস্থিত। এটি নয়টি নিম্ন অ্যাটল (প্রবাল প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত দ্বীপ) দ্বারা গঠিত। এর গড় উচ্চতা মাত্র ৬ ফুট (২ মিটার)। সর্বোচ্চ বিন্দুটিও মাত্র ১৫ ফুট (৪.৫ মিটার)। গত ৩০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬ ইঞ্চি (১৫ সেন্টিমিটার) বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে ২০৫০ সালের মধ্যে টুভালুর অর্ধেক জলে ডুবে যাবে। ২১০০ সালের মধ্যে ৯০% এরও বেশি ভূমি বিলীন হয়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি, ঝড়, বন্যা এবং জলোচ্ছ্বাস টুভালুকে ধ্বংস করছে। সমুদ্রের লবণাক্ত জল মিষ্টি জলের কূপে প্রবেশ করছে, যা পানীয় জল এবং ফসল নষ্ট করছে। মানুষ তাদের ফসল মাটির উপরে তুলতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু এটিও বেশি দিন কার্যকর হবে না। নাসার মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে ফুনাফুতি (রাজধানী), যেখানে ৬০% মানুষ বাস করে, তার অর্ধেক প্রতিদিন জলে ডুবে যাবে।
অস্ট্রেলিয়া-টুভালু ফালেপিলি ইউনিয়ন চুক্তি
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া এবং টুভালু ২০২৩ সালে ফালেপিলি ইউনিয়ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যা ২০২৪ সালে কার্যকর হয়। এটি বিশ্বের প্রথম এই ধরনের চুক্তি, যা জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত একটি সম্পূর্ণ দেশের অভিবাসনের জন্য। এই চুক্তির আওতায় প্রতি বছর টুভালুর ২৮০ জন মানুষ অস্ট্রেলিয়া যেতে পারবে। ১৬ জুন থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ভিসার জন্য রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল। প্রথম চার দিনেই ৩১২৫ জন আবেদন করেছিলেন। এখন পর্যন্ত ৫,১৫৭ জন ভাগ্য পরীক্ষা করেছেন, যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক (১১,০০০)। এই ভিসার মাধ্যমে, টুভালুর মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে পারবেন। তাঁরা কাজ করতে পারবেন, পড়াশোনা করতে পারবেন। তাঁরা অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের মতো স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা পেতে পারবেন। তাঁরা যখনই চান টুভালুতে ফিরে যেতে পারবেন, কিন্তু ডুবন্ত দেশে ফিরে যাওয়ার আশা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ান সরকার বলছে যে জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জীবন, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যত ধ্বংস করছে। জলবায়ু পরিবর্তন টুভালুকে এক ভয়াবহ সংকটে ফেলেছে। সমুদ্রের জলের ক্রমবর্ধমান উচ্চতা কেবল ভূমিই গ্রাস করছে না, বরং মাছ ধরার মতো জীবনযাত্রার উপায়ও ধ্বংস করছে। প্রবাল প্রাচীরগুলি মারা যাচ্ছে, যা সামুদ্রিক জীবন এবং উপকূল রক্ষা করত। মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারাচ্ছে। খাদ্য ও জলের সংকট আরও গভীর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন যে ৮০ বছরের মধ্যে টুভালু পুরোপুরি বসবাসের উপযোগী থাকবে না। ভিসা নিয়ে প্রতি বছর ২৮০ জন মানুষ যাবে, কিন্তু দেশের জনসংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কম। যদি এই গতি অব্যাহত থাকে, তাহলে ১০ বছরের মধ্যে ৪০% মানুষ চলে যাবে।