গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের যে রায় দিয়েছে তাতে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি গিয়েছে । স্বভাবতই এমন ঐতিহাসিক রায় ঘিরে সব মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ৷ ২৮২ পাতার এই রায়ের পরতে পরতে আছে আরও বিস্ফোরক তথ্য ৷ বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নির্ধারিত আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি নিয়োগ থেকে শুরু করে প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চাকরি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। রায়ের একটি অংশে (৩৩৫) বলা আছে ঠিক কোন কোন বেনিয়ম হওয়ায় ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে হাইকোর্ট ৷ এই আবহেই বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখান থেকেই তিনি জানিয়ে দেন, এখন থেকে যে এসএসসি পরীক্ষা হবে, তার ওএমআর ১০ বছর সংরক্ষিত রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিলের পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশনামা দিয়েছিল, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, এসএসসি যে ওএমআর শিট স্ক্যান করে, তারও কোনও প্রমাণ রাখা হয়নি। কারণ এসএসসি-র সার্ভারে কোনও স্ক্যান কপি নেই। তদন্ত চলাকালীন কোনও স্ক্যান বা মিরর কপি পায়নি সিবিআই। ওএমআর শিটের কোনও স্ক্যানড কপি সার্ভারে না রেখেই হার্ড কপি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের উত্তরপত্রের স্ক্যানড কপি দিয়েছে এসএসসি। হাইকোর্টের তরফে বলা হয়েছে, যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করে দেয়নি এসএসসি। আর তাতেই গোটা প্যানেল বাতিল। তারপরেই যোগ্য চাকরিহারাদের তরফে প্রশ্ন উঠছে,নিয়োগ দুর্নীতি ঢাকতেই কি কম সময়ে OMR নষ্ট করার সিদ্ধান্ত? এই নিয়েই এবার জবাব দিলেন ব্রাত্য। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, এখন থেকে যে এসএসসি পরীক্ষা হবে, তার ওএমআর ১০ বছর সংরক্ষিত রাখা হবে।
পাশাপাশি এদিন সুপার নিউমেরিক পোস্ট নিয়েও মুখ খোলেন ব্রাত্য বসু। গত সোমবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, "চোরদের নিয়োগ করার জন্য বাড়তি পোস্ট তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২২ সালের ৫ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।" সেদিন ক্যাবিনেটে যারা উপস্থিত ছিল তাদের সবাইকে অবিলম্বে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার দাবি তুলেছিলেন শুভেন্দু। এদিন শুভেন্দুর ওই অভিযোগ কার্যত খারিজ করে দিলেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ব্রাত্য বলেন, "সুপার নিউমেরিক পোস্ট থেকে সরকার কাউকে চাকরি দেয়নি। যে একজনকে দেওয়া হয়েছিল সেটা তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বর্তমানে বিজেপির তমলুক কেন্দ্রের প্রার্থীর নির্দেশে।"
বিজেপির তরফে ইতিমধ্যে দাবি করা হচ্ছে, অযোগ্যদের সুযোগ করে দিতেই রাজ্য ইচ্ছে করে যোগ্যদের লিস্ট হাইকোর্টে জমা দেয়নি। বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক বৈঠক থেকে সেই অভিযোগও খারিজ করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। ব্রাত্য বলেন, "স্কুল সার্ভিস কমিশন দু'বার এফিডেভিট দিয়ে জানিয়েছিল কারা অযোগ্য। সেই সংখ্যাটা ৮ শতাংশ। সবটাই আদালতকে জানানো হয়েছিল।" পাশাপাশি হাইকোর্টের রায় নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেন ব্রাত্য। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘এই ছেলেমেয়েগুলিকে বলির পাঁঠা ভাবছে বিজেপি। এদের জন্য কোনও দরদ নেই ওদের। দরদ আছে শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যোগ্যদের জন্য তিনি যতদূর যাওয়ার যাবেন। ৮ শতাংশ অযোগ্য, যোগ্য ৯২ শতাংশ।’’