Advertisement

Bengal New Education Policy: রাজ্যে অনার্সে ৪ বছরে গ্র্যাজুয়েশন-মাস্টার ডিগ্রি ১ বছর, সুবিধা-অসুবিধা কী? অধ্যাপকরা যা বলছেন...

Bengal New Education Policy: নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর ঠিক আগে নতুন নীতি রাজ্যের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় ঠিক কীভাবে কার্যকর করা সম্ভব? সিলেবাস, পঠনপাঠনের ধরন-সামগ্রিক পরিকাঠামোয় এত দ্রুত বদল কীভাবে সম্ভব? নয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় কী সুবিধা আর কী কী সমস্যা হতে পারে? জেনে নিন রাজ্যের শিক্ষক-অধ্যাপকদের মতামত...

রাজ্যে অনার্সে ৪ বছরে গ্র্যাজুয়েশন-মাস্টার ডিগ্রি ১ বছর, সুবিধা-অসুবিধা কী?
সুদীপ দে
  • কলকাতা,
  • 02 Jun 2023,
  • अपडेटेड 2:58 PM IST
  • নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর ঠিক আগে নতুন নীতি রাজ্যের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় ঠিক কীভাবে কার্যকর করা সম্ভব?
  • সিলেবাস, পঠনপাঠনের ধরন-সামগ্রিক পরিকাঠামোয় এত দ্রুত বদল কীভাবে সম্ভব?
  • নয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় কী সুবিধা আর কী কী সমস্যা হতে পারে?

Bengal New Education Policy: জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে না নিলেও বাংলায় অনার্স গ্র্যাজুয়েট পাঠক্রমের মেয়াদ ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৪ বছর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নতুন শিক্ষা নীতির করেন। এর আগে বুধবার শিক্ষা দফতরের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল।

এই নতুন শিক্ষা নীতি প্রসঙ্গে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, রাজ্য কোনও ভাবেই জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ করছে না। রাজ্যের পৃথক শিক্ষানীতি অনুযায়ীই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বিষয়টা আরও স্পষ্ট হল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের পড়ুয়াদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইউজিসি প্রস্তাবিত নীতি কার্যকর করতে রাজি হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, বাংলার ছাত্রছাত্রীরা যাতে প্রতিযোগিতায় অন্য রাজ্যগুলির থেকে পিছিয়ে না পড়ে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।

আরও পড়ুন: রাজ্যে ৪ বছরের অনার্স-১ বছরের মাস্টার্স, জানালেন মমতা

মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট, কেন্দ্রের দেশজুড়ে ‘এক শিক্ষানীতি’ কার্যকর করার চাপে রাজ্যের পড়ুয়াদের স্বার্থে এই ৪ বছরের অনার্স-১ বছরের মাস্টার্স ব্যবস্থা চালু করতে হচ্ছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর ঠিক আগে নতুন নীতি রাজ্যের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় ঠিক কীভাবে কার্যকর করা সম্ভব হবে? নতুন সিলেবাস, পঠনপাঠনের ধরন-সামগ্রিক পরিকাঠামোয় এত দ্রুত বদল কীভাবে সম্ভব হবে? নয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় কী সুবিধা আর কী কী সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে নিজেদের মতামত এবং ধারণা সম্পর্কে bangla.aajtak.in-এ জানালেন রাজ্যের শিক্ষক-অধ্যাপকরা।

কেন চার বছরের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স?
চার বছরের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স ইউরোপ ও আমেরিকায় বহু বছর ধরে চালু। আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় তাই অসুবিধার মধ্যে পড়তেন। স্নাতক ডিগ্রী থাকা সত্ত্বেও এক বছরের ব্রিজ কোর্স করে তাঁদের স্নাতকোত্তরে পড়াশোনার যোগ্যতা অর্জন করতে হতো। এই সমস্যা মেটাতে নয়া শিক্ষানীতিতে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রীর সুপারিশ করা হয়েছে।

Advertisement

নয়া শিক্ষাব্যবস্থার সুবিধা-অসুবিধা:
স্নাতকোত্তর স্তরে পৌঁছেই ছাত্রছাত্রীরা প্রথম গবেষণাধর্মী পড়াশোনার স্বাদ পান। তাই এক বছরে মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করা খুব অভিপ্রেত হতে পারে না। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায়, পিজি (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট) ওয়ানের সিলেবাস ইউজি (আন্ডার গ্র্যাজুয়েট) ফোরে নিয়ে এসে স্নাতক আর স্নাতকোত্তর স্তরের সেতুবন্ধন করা সম্ভব, তবু কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। যেমন, স্নাতকোত্তর স্তরে একদিকে যেমন স্পেশালাইজেশনের ওপর জোর দেওয়া হয়, তেমনই ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি চর্চার প্রয়োজন ও সম্ভাবনাও সেখানে প্রচুর। সুতরাং, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তর দু'টিকে মেলাতে হলে প্রথমে ইউজি সিলেবাসের খোলনলচে বদলে চরিত্রগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। শুধুমাত্র অনার্স গ্রুপ নয়, পাস কোর্সের সিলেবাসেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আর প্রয়োজন রিফ্রেশার কোর্স ও বিভিন্ন ওয়ার্কশপের মধ্য দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নতুন পাঠ্যক্রমের সাপেক্ষে সম্পন্ন করে তোলা। তা না হলে শুধু বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া মুষ্টিমেয় ছাত্রছাত্রীই নতুন নিয়মে উপকৃত হবেন, অধিকাংশ সাধারণ ছাত্রছাত্রীর বিপক্ষেই যাবে এই নতুন শিক্ষানীতি।
মিথুন নারায়ণ বসু, শিক্ষক
ভূতপূর্ব সদস্য, এক্সপার্ট কমিটি অন স্কুল এডুকেশন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার মুখে এই নতুন শিক্ষানীতি চালু হওয়া আমার মনে হয় ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলের জন্যই বেশ বিভ্রান্তিকর। কারণ, কীভাবে কী হবে তা ছাত্রছাত্রীরাও জানে না, আমরাও জানি না। নতুন যাঁরা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তি হবে তাঁরা চার বছরের কোর্সে পডাশুনা করবে। তাদের পঠনপাঠনের তৃতীয় বর্ষের পর আরও দু’টি সেমিস্টারের প্রয়োজন হবে। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেই উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই। প্রয়োজন মাফিক শিক্ষক-শিক্ষিকারও অভাব রয়েছে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতিতে অনেক ভাল ভাল কথা বলা হয়েছে। বেশ কিছু সময়োপযোগী পরিবর্তনের সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্ত কার্যকর করতে যখনই আর্থিক প্রয়োজনের প্রশ্ন ওঠে, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ‘অটোনমাস’ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে ‘অটোনমাস’ হওয়ার মানে কী! ‘অটোনমাস’ হওয়া মানে হল বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আর্থিকভাবে সাবলম্বি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আর্থিকভাবে সাবলম্বি হওয়ার অর্থ হল পরোক্ষভাবে পড়ুয়াদের উপর পঠনপাঠনের খরচের বোঝা চাপানো। এ ক্ষেত্রে সব স্তরের পড়ুয়াদের পক্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। ফলে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ‘ড্রপআউট’ বাড়বে। এছাড়া, গত ৭-৮ বছরে যতবার সিলেবাসে বদল আনা হয়েছে তা ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলের জন্যই বেশ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। একটা সিলেবাস ভাল না খারাপ, কার্যকর কিনা, তা বোঝার জন্য তাকে কিছুটা সময় দিতে হয়। সিলেবাস বা কোনও পরিবর্তিত শিক্ষানীতি বুঝে ওঠার আগে বা তাতে অভ্যস্ত হওয়ার আগেই তা বদলে যাচ্ছে। এই ক্রমাগত পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলের জন্যই বেশ বিভ্রান্তিকর।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়, ইংরাজির অধ্যাপিকা

রাজ্যের পড়ুয়াদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইউজিসি প্রস্তাবিত নীতি অনুযায়ী এখানে ৪ বছরের অনার্স এবং এক বছরের মাস্টার্স কোর্স চালু করতে হচ্ছে। এদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠন চালু হতে আর বেশি দিন বাকি নেই। এমনটাই যদি হয়, তবে ব্যাপারটা তাড়াহুড়ায় এমন দাঁড়াবে হয়তো, স্নাতকোত্তর স্তরের বর্তমান পাঠক্রমের প্রথম বছরের পাঠ্যসূচির পুরো অংশটাই স্নাতক স্তরের চতুর্থ বর্ষের পাঠ্যসূচি হিসেবে গৃহীত হবে। না হলে এত দ্রুত গোটা খোলনলচে বদলে ফেলা খুব একটা উচিত বলে আমি মনে করি না। তবে কেন্দ্রীয় নীতি অনুযায়ী এই নতুন ব্যবস্থায় পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে আরও কিছুটা সময় পড়ুয়া থেকে শিক্ষক— সকলেরই প্রয়োজন। নতুন পাঠ্যক্রম সফল ভাবে কার্যকর করতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও রিফ্রেশার কোর্স ও বিভিন্ন ওয়ার্কশপের প্রয়োজন। আর অনার্সের পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি পাস কোর্সের সিলেবাসেরও পরিবর্তন আনা জরুরি।
রুদ্রশেখর সাহা, শিক্ষক
ভূতপূর্ব সদস্য, এক্সপার্ট কমিটি অন স্কুল এডুকেশন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

Advertisement

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement