কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। জাতীয় শিক্ষানীতিকে ‘তুঘলকি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতি রাজ্য গ্রহণ করেনি, সম্প্রতি বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে জানিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে রাজ্য়ের তরফে নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়েছে, সেই বথাও বলেছিলেন ব্রাত্য বসু। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভর বৈঠকে সেই শিক্ষানীতিতে সিলমোহর দিল তৃণমূল সরকার। ইতিমধ্যে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের নয়া শিক্ষানীতি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের নিজস্ব শিক্ষানীতি তৈরি করল ৷ কেমন হচ্ছে সেই শিক্ষানীতি? মোদী সরকারের শিক্ষানীতি থেকেই বা কতটা আলাদা রাজ্যের শিক্ষানীতি। এই নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে মানুষের মনে। সোমবার মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া এই শিক্ষানীতিতে যেমন চার বছরের ডিগ্রি কোর্স থাকছে, তেমনই সরকারি ও বেসরকারি - সব স্কুলেই বাধ্যতামূলক হচ্ছে ইংরেজি ও বাংলা ভাষা ৷ চলুন দেখে নেওয়া যাক কেমন হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সরকারের নতুন শিক্ষানীতি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন শিক্ষানীতি
- রাজ্যে চালু হওয়া চার বছরের ডিগ্রি কোর্স এই নতুন শিক্ষানীতির অংশ।
- জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে এখনই ৪ বছরের বিএড কোর্সের দিকে হাঁটছে না রাজ্য সরকার। দু'বছরের কোর্সই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
- রাজ্যের সমস্ত স্কুলের ইংরেজি ও বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে । সরকারি এবং বেসরকারি উভয় স্কুলেই ছাত্র-ছাত্রীদের এই ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে তৃতীয় ভাষা হিসেবে কোনও স্কুল চাইলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্থানীয় ভাষাকে গুরুত্ব দিতে পারে ।
- বাংলা ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হলেও একই সঙ্গে স্থানীয় ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে । যাতে এই নিয়ে নতুন করে কোনও আঞ্চলিক আবেগ থেকে উত্তাপ তৈরি না হয় । এক্ষেত্রে যেখানে যে জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যার মানুষের বাস বেশি রয়েছে, সেখানে আঞ্চলিক ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে সেই ভাষাও পড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
- জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাইমারি থেকেই তিনটি ভাষা শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। রাজ্য শিক্ষানীতিতে তা চালু করা হবে আপার প্রাইমারি থেকে।
- শিক্ষানীতির অংশ হিসেবে শিক্ষা কমিশনের কথা বলা হয়েছে । এর মাধ্যমে বেসরকারি স্কুলগুলির ইচ্ছা খুশিমতো ফি নেওয়ার পথে একটা নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছে রাজ্য সরকার ।
- রাজ্য শিক্ষা নীতির খসড়া তৈরির জন্য কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা দফতর। কমিটি সুপারিশ করেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রম বিবেচনা করে প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেভেলে বর্তমান সিলেবাসের পুনর্মূল্যায়ণ করা হোক। তার পর অষ্টম শ্রেণি থেকে সেমিস্টার ব্যবস্থা চালু করা হোক। আগামী ৩ বছর ধরে ধাপে ধাপে তা করা হোক।
- একই ভাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতেও সেমিস্টার ব্যবস্থা চালু হোক। যাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পৌঁছে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হয়। কমিটির এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে শিক্ষা দফতর।
- কমিটি সুপারিশ করেছে যে উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা মূলক এবং এমসিকিউ (MCQ) দু’রকমের মূল্যায়ন ব্যবস্থা রাখা হোক। এমসিকিউ-র জন্য ছাত্রছাত্রীরা যাতে প্রস্তুতি নিতে পারে সেজন্য সেরকম বইও প্রকাশ করা হোক। কমিটির এই প্রস্তাব গ্রহণেও রাজি রাজ্য শিক্ষা দফতর।
- জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, নবম শ্রেণি থেকেই ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিষয় নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু রাজ্য শিক্ষা দফতর তাতে কোনও ভাবেই একমত নয়। রাজ্য সরকার গঠিত কমিটিও সুপারিশ করেছে যে, বর্তমান ৪+৪+২+২ ব্যবস্থাই বহাল থাকুক।
- স্কুল স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পদোন্নতির সুপারিশও মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। খতিয়ে দেখা হবে তাঁদের পারফরম্যান্স। স্কুলগুলির মধ্যে 'হাব অ্যান্ড স্পোক' পদ্ধতিতে ইতিমধ্যেই সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে স্কুলগুলির সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।