দেশজুড়ে ইতিমধ্যেই লাগু হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। মতুয়াদের প্রধান দাবি ছিল নাগরিকত্ব অধিকার এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসন। দেশ জুড়ে নাগরিকত্ব আইন চালু হতেই উৎসবে মাতেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। ঠাকুর বাড়িতে ঢোল, কাসর, করতাল নিয়ে তারা উৎসবে মাতেন। তবে এই নিয়ে এদিন মতুয়া সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় জনসভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলার নাগরিকদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে তিনি মানুষের পাশেই রয়েছেন ৷ জোর করে কারও নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে কোনওভাবেই তা মেনে নেওয়া হবে না । সবচেয়ে বড় কথা, রুল ফ্রেম হলেও এখনও পর্যন্ত তার কপি তিনি পাননি । তাই এখনই এই নিয়ে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া নয় । মঙ্গলবার হাবড়ার বানিপুরে সভা থেকে বিস্তারিত বলবেন তিনি। এদিন জনসভায় মমতা বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে প্রতারণা, ছলনা, বঞ্চনা, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। যে সিএএ-র কথা কেন্দ্রের সরকার ঘোষণা করেছে, আদৌ তা বৈধ কি না সন্দেহ আছে। পুরোপুরি ভাঁওতা। ২০১৯ সালে অসমে ১৩ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। অনেকে আত্মহত্য করেন।’’
এদিন উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া অর্থাৎ মতুয়া গড় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। মমতা বলেন, এটা ভাওতা, ২-৩টে সিটে জেতার জন্য সিএএ ইস্যুকে সামনে আনা হচ্ছে। হাবড়ায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘‘ সিএএ বিজেপির লুডো খেলার ছক্কা। আবেদন করার পর এনআরসি করা হবে। ডিটেনশেন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বা্ংলা থেকে তা করতে দেব না।
মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী বলেনবলেন, ‘‘মনে রাখবেন সব হারাবেন। ওরা ভাঁওতা দিচ্ছে। সব দিক যাবে। ইচ্ছা করে কালকের দিনটা বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ কাল থেকে রমজান শুরু হয়েছে। এই সিএএ, এনআরসির সঙ্গে যুক্ত মনে রাখবেন। শুধুমাত্র আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আনা হবে। শ্রীলঙ্কা, মায়নমার বাদ। এমন অনেক পরিবার রয়েছেন, যাঁদের এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় বিয়ে হয়েছে। তাঁরা যোগাযোগ করতে পারবেন না। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব কখনও কেউ শুনেছেন?’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের আধারকার্ড কেন বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওরা ফর্মে বাবার জন্মের শংসাপত্র আনতে বলেছে। আমার কাছে বাবার জন্ম শংসাপত্র নেই। অনেকের কাছেই নেই। অনেকে খুশি হচ্ছে। কতটা ভয়ঙ্কর বুঝতে পারছেন না।’
মমতা বলেন, 'আপনারা দরখাস্ত করলে সব নাগরিকত্ব বাতিল করে দেবে। অধিকার বাতিল করে দেবে। এটা এনআরসি-র সঙ্গে কানেকটেড। আপনাদের ডিটেনশান ক্যাম্পে নিয়ে যাবে। এই দরখাস্ত করার আগে বারবার ভাববেন। একবার নয় হাজার বার ভাবুন।'
'কী করেছেন মতুয়াদের জন্য?'
মমতা মঞ্চ থেকেই বিজেপির নাম না করেই প্রশ্ন তোলেন, করেছেন মতুয়াদের জন্য? বড়মা যতদিন ছিলেন তাঁর দেখাশোনা আমি করেছি। মমতাবালা ঠাকুর করেছেন। বড়মাকে বেলিভিউতে আমিই ভর্তি করেছি। মতুয়াদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় কে করেছে? মতুয়াদের পূণ্যদিনটিকে কে ছুটি করল?সবটাই করবো। আমাদের অধিকার নাগরিকের অধিকার। আমার রাজ্যে অধিকার কাড়তে দেব না। মুখ্যমন্ত্রী সিএএ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আপনি মতুয়া ছিলেন, মতুয়া থাকতে পারবেন তো। যদি কোনওদিন সুযোগ আগে দেশে NRC করতে দেব না।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোটে জিততে ভাঁওতা দিচ্ছে। মতুয়া ভাইবোনদের বলছি, এই আইন ২০১৯ সালে পাশ হয়েছে। এতদিন কার্যকর কেন করেনি? এখন নির্বাচনের আগে মানুষ অধিকার পায়। খবরদার এই পথে যাবেন না। বিজেপি বিভিন্ন কথা বলবে। কিন্তু এই পথে হাঁটবেন না।’