দমদম কেন্দ্র থেকে এবারও তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ সৌগত রায়। আজ খড়দায় তাঁর সমর্থনে জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান যে তিনি ভেবেছিলেন সৌগত রায় এবার নাও প্রার্থী হতে পারেন। গোটা বিষয়টা নিজে ব্যাখ্যাও করেন মমতা। তিনি বলেন, 'সৌগতদা হচ্ছে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র। রাজনীতিতে আমরা যখন জয়েন করেছি। তখন সৌগতদা প্রদেশ কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। সৌগতদার সঙ্গে আমার রোজ দেখা হত অরুণদার বাড়িতে। এই মানুষটা চিরকাল সবুজ, কাজের প্রচুর আগ্রহ। বিয়েবাড়ি, পৈতেবাড়ি, পুজোবাড়িও ছাড়ে না। মানুষের কাজে সবসময় তাঁকে পাওয়া যায়। অজিত পাঁজার পরে দেখেছি সৌগতদাকে বাড়ি বাড়ি প্রচার করতে।'
এরপরেই মমতা বলেন, 'আমি এবারে ভেবেছিলাম সৌগতদা দাঁড়াবে না। আমি জিজ্ঞাসা করতে বলল হ্যাঁ দাঁড়াব। আমি ভাবলাম উনি দাঁড়ালে আমার তো চিন্তার কোনও কারণ নেই। সংসদে বলার একমাত্র লোক হচ্ছে সৌগতদা। যাকে বিজেপি কোনওদিন হারাতে পারে না।' মমতার মুখে প্রশংসা শোনা যায় খড়দার বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, 'যখন কাজল (খড়দার প্রাক্তন বিধায়ক কাজল সিনহা) মারা গেল, তখন সেই সময় আমি ভাবলাম কী হবে? হাতের সামনে কাউকে পাচ্ছিলাম না। আমাকেও ভবানীপুরে দাঁড়াতে হবে। সেই জন্য শোভনদাকে অনুরোধ করে খড়দাতে পাঠিয়েছিলাম। উনি ভবানীপুরের এমএলএ ছিলেন। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ শোভনদাকে জিতিয়ে ভবানীপুরে আমার সম্মান রক্ষা করেছেন। শোভনদাও অনেক পুরনো রাজনীতিবিদ। সৌগতদার পরের জেনারেশন হচ্ছে শোভনদা। সৌগতদা, শোভনদা, সুব্রতদা আর সুদীপদা সবচেয়ে পুরনো আমরা দেখেছি। আমাদের সময় এরা টগবগ করে তাজা ঘোড়ার মতো রাজনীতি করত। এমন কোনও প্রোগ্রাম নেই যে যেখানে যায়নি।'
লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণার কয়েক মাস আগে থেকেই তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক শুরু হয়। রাজনীতিতে বয়সের সীমা বেঁধে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যে মন্তব্যে নিয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, লোকসভা ভোটে কি তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদরা টিকিট পাবেন না? নতুনদের সুযোগ দেবে দল? লোকসভা ভোটের ঠিক আগে নিজের টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয়প্রকাশ করেছিলেন সৌগত রায়ও। এমনকি দল প্রার্থী করলে তিনি আদৌ জিততে পারবেন কি না, তা নিয়েও সন্দিহান ছিলেন তিনি।
সেই সময় সৌগত রায় বলেন,'আমার সাংসদ পদে ১৫ বছর সম্পূর্ণ হতে চলল। এর পর কী হবে জানি না! দল কাকে মনোনয়ন দেবে, যদি আমায় দেয়, আমি জিততে পারব কি না, এগুলো সবই অনিশ্চয়তা। আমি সবসময় মনে করি,আমরা যা করি মানুষ যেন মনে রাখে।' রবীন্দ্রনাথের গান উদ্ধৃত করেছেন করেছেন সৌগত। তাঁর কথায়,'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই পথে…। কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি। সকল খেলায় করব খেলা এই আমি। কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি। নতুন নামে ডাকবে মোরে বাঁধবে নতুন বাহুডোরে আসব যাব চিরদিনের সেই আমি। তখন আমায় নাই বা মনে রাখল...'।
যদিও পরে দমদমে আবারও মনোনয়ন পেয়ে আত্মবিশ্বাসী দেখায় সৌগত রায়কে। বলেছিলেন, 'মনোনয়ন পেয়েছি, জয়ও নিশ্চিত। সংবাদমাধ্যমের একাংশ চক্রান্ত করে এটা বলছে। আমি বলেছিলাম আমার মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নিশ্চয়তা নেই, জেতাটাও নিশ্চয়তা নেই। তবে গতকাল দেখলাম মনোনয়ন পেয়েছি এবং জয়ও নিশ্চিত, এটাই আমি বললাম।'