শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তাঁকেই কার্যত মুখ করে এগোচ্ছিল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের অন্দরমহলের খবর, শুভেন্দু অধিকারীর উপর অবাধ বিশ্বাস রেখেছিল অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদীরা। তাঁর হাতেই রাজ্য বিজেপির হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তিনি দিচ্ছিলেন নেতৃত্ব। তবে সেই শুভেন্দু শো কার্যত ফ্লপ, এমনটাই বলছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ।
বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচারের ম্যাপ তৈরি সবক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ভোটে রাজ্যে ভালো ফল করলে শুভেন্দু আগামী বিধানসভা ভোটে আরও বড় দায়িত্ব পেতেন। তবে শুভেন্দু এই ভোটে বড়সড় ধাক্কা খেলেন, তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
বিজেপি সূত্রে খবর, শুভেন্দুকে সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে নানা কারণে। তার মধ্যে অন্যতম হল, তিনি যাঁদেরই প্রার্থী করেছেন তাঁরাই কার্যত হারের মুখে পড়েছেন। তালিকার মধ্যে রয়েছেন অগ্নিমিত্রা পাল, অর্জুন সিং, শীলভদ্র দত্ত, তাপস রায়। দলের একাংশ শুভেন্দুর উপর ফুঁসছেন দিলীপ ঘোষের হারের জন্যও। কারণ, মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে এর আগে জিতেছিলেন তিনি। তাঁকে সরিয়ে সেই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয় অগ্নিমিত্রা পালকে। বিজেপির একাংশের অভিযোগ, শুভেন্দুর হস্তক্ষেপেই সেখানে প্রার্থী করা হয় অগ্নিমিত্রাকে। তার ফলে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে দাঁড়াতে হয় দিলীপ ঘোষকে। তিনি হেরেও যান।
একই অবস্থা অর্জুনেরও। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনি তৃণমূল করতেন। লোকসভায় টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে ফিরে আসেন। তবে তাঁকে দলে নিতে চাননি সুকান্ত মজুমদারর মতো নেতারা। শুভেন্দুর হস্তক্ষেপেই অর্জুনের দলে প্রত্যাবর্তন হয় বলে খবর।
শীলভদ্র দত্ত ও তাপস রায়ও শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাপস রায় শুভেন্দুর হস্তক্ষেপেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন বলে খবর। সেই তাপস রায়ও পিছিয়ে রয়েছেন। শীলভদ্র দত্তকেও দমদম থেকে প্রার্থী করা হয়। তিনিও কার্যত পরাজিত হয়েছেন। ব্যতিক্রম একমাত্র অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জিততে চলেছেন তমলুক থেকে।
রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবী, শুভেন্দুর উপর বেশিই ভরসা করে ফেলেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁর ইচ্ছেতেই একাধিক জনকে পছন্দমতো জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছিল। দলের প্রবীণ নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। সবাই প্রচারও করেননি। ফলে জনসভায় লোক হলেও সাংগঠনিকস্তরে মজবুত হয়নি বিজেপি। তারই ফল হাতে নাতে পেল রাজ্য বিজেপি।