দ্বিতীয়বারের সাংসদ তিনি। বছরের প্রথমদিকে তিনি রাজনীতি ছাড়ার পরিকল্পনা করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে সেটা আর করা হয়নি। অতঃপর লোকসভা নির্বাচনে ঘাটালের প্রার্থী আবার তাঁকেই করা হল। আর সেই দেব হ্যাটট্রিক করতে চলেছেন। ঘাটালে ফের সবুজ আবিরের জয় তাঁর ক্যরিশমাতেই। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান তো ছিলই আর তার সঙ্গে দেবের প্লাস পয়েন্ট ছিল তাঁর সৌজন্য। আর ঘাটালের জয় একরকমভাবে দেবের কারণেই এসেছে।
দেবের বিপরীতে এবার ছিলেন তাঁরই বিনোদন দুনিয়ার প্রাক্তন সহকর্মী হিরণ। দেব ও হিরণ ভোটের প্রচারে কোনও খামতি না রাখলেও জয়টা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন সেই দেব। যদিও লড়াই ছিল একেবারে হাড্ডাহাড্ডি। টলিউডের ‘চ্যাম্পিয়ন’ বনাম ‘মাচো মস্তানা’!ঘাটালের রাজনৈতিক লড়াই মোটামুটি এই বৃত্তেই ঘোরাফেরা করছিল। এই বছরের লোকসভায় ঘাটাল বিশেষ করে সকলের নজরে ছিল বেশ কিছু কারণে। প্রথম, দেব রাজনীতি থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন। পুরো সময়টাই দিতে চেয়েছিলেন অভিনয় ও প্রযোজনার কাজে। তবে ছাড়েননি রাজনীতি। দ্বিতীয়ত, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, যা সম্পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজ্য সরকার। অতএব সব জল্পনার সমাপ্তি। ঘাটালে ফের খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন। সেই শুরু। দল যে দায়িত্ব দিয়েছিল তা রক্ষা করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছিলেন তারকা। নিজের কেন্দ্রে তো বটেই, ঘুরে ঘুরে প্রায় গোটা বাংলাতেই প্রচার করেছিলেন তিনি।
জেতার খবর কানে আসতেই উৎফুল্ল দেব। নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে জাহির করলেন নিজের খুশি। দুই গালে ও কপালে সবুজ আবির, উসকো খুসকো চুল, চোখে সানগ্লাস, দাঁড়ি কাটা নেই। এই ছবি শেয়ার করে দেব লিখেছেন ফাইনালি। অর্থাৎ তিনি যে জিতে গিয়েছেন তা বুঝতেই পেরে গিয়েছেন। ঘাটালের ঘরের ছেলেই হয়ে গিয়েছেন দেব। অতএব আশা হোক আর ভরসা, দেব-এ ছিল অটুট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বর্তমান হলেও, কোথাও গিয়ে যেন দেব অনেকটাই স্বস্তিতে।
খড়্গপুরের প্রাক্তন বিধায়কের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাঁর নজর ঘাটালের আসন জেতার থেকেও তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল বিভিন্ন ইস্যুতে দেবকে আক্রমণ করা। ভোটপ্রচারের ময়দানে কখনও দেবের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছেন, আবার কখনও বা চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনের তরফে নোটিস পেয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সৌজন্য বনাম দোষারপের সিঁড়িভাঙা অঙ্কতেই ক্রমশ যেন পিছিয়ে যেতে শুরু করলেন হিরণ। ভোটের ফলাফল তাতেই সিলমোহর দিয়ে দিল। তবে জয়ের যাত্রাপথে চড়াই-উতরাই ছিলই। প্রাথমিক ট্রেন্ডে দেখা গিয়েছিল, অন্তত কিছুক্ষণের জন্যও এগিয়ে ছিলেন হিরণ। বেলা গড়াতে লিড নিতে শুরু করেন দেব। সেই লিড ক্রমশ বাড়তে থাকে। বেলাশেষে ঘাটালের ভোট আর মন জিতলেন দেবই।