দীর্ঘদিনের গুরু সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যকে প্রণাম করে বিধায়কের ইনিংস শুরু করলেন বিজেপির শঙ্কর ঘোষ। নির্বাচনের কদিন আগেই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দল সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন শঙ্করবাবু। নির্বাচনে লড়ে তিনি গুরুকেই পরাস্ত করেন। বিধায়ক হিসেবে শপথও নেন তিনি। এরপরই শনিবার শিলিগুড়ি ফিরে অশোকবাবুর বাড়ি চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান ফুলের তোড়া ও বই।
শিলিগুড়ির রাজনৈতিক সৌজন্যের নজির অব্যাহত
রাজ্যজুড়ে যেখানে ভোট পরবর্তী হিংসা অব্যাহত, সেখানে শিলিগুড়ি তার সৌজন্যের রাজনীতি থেকে সরে আসেনি। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে বিধায়ক হিসেবে শপথ গ্রহণ করে কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে পা রেখেই পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বী তথা রাজনৈতিক গুরু বলে পরিচিত বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের বাড়িতে আশীর্বাদ গ্রহণ করতে গেলেন বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ। সঙ্গে ছিল বই। শনিবার বিকেলে কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে ফিরে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে সোজা অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যান বিধায়ক শংকর ঘোষ।
অশোকবাবুর শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজ নিলেন শঙ্কর
যদিও অশোক ভট্টাচার্য সঙ্গে দেখা করার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে জানিয়েছেন শঙ্কর ঘোষ। এদিন তিনি শুভেচ্ছা হিসেবে অশোক ভট্টাচার্যর হাতে বইয়ের প্যাকেট তুলে দেন। দুজনের মধ্যে শহরের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাও হয় বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি অশোকবাবুর করোনা ভ্যাকসিন নেওয়া হয়েছে কিনা সহ তার শারিরীক সুস্থতার বিষয়ে খবরাখবর নেন সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। অন্যদিকে শঙ্করবাবুকেও তার নতুন রাজনৈতিক জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অশোক ভট্টাচার্য।
সৌজন্য ফিরিয়ে দিলেন অশোকবাবুও
অশোক ভট্টাচার্য বলেন, "প্রতিদ্বন্দিতা যাই হোক না কেন, একজন নির্বাচিত বিধায়ক আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। আমার দেখা করা দায়িত্ব। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবশ্যই সাহায্য করব। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে যেমন লড়াই আমাদের চলছিল তাই চলবে।"
শঙ্কর উবাচ
অন্যদিকে এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শঙ্কর ঘোষ বলেন, "দীর্ঘদিন দুজনে একসাথে রাজনীতি করেছি। বিশেষ করে ২০১১ সালের পর থেকে বিভিন্ন আন্দোলন এবং কর্মসূচিতে একসাথে ছিলাম। অশোকবাবু দীর্ঘদিন মন্ত্রী এবং শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রশাসক ছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি সেটাকেই আগামীতে কাজে লাগাতে চাই। "
শঙ্কর-অশোকের ব্যক্তিগত সম্পর্ক
দীর্ঘ ত্রিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য ছায়া সঙ্গী হিসেবে শিলিগুড়িতে পরিচিত ছিলেন শঙ্কর ঘোষ। অশোক ভট্টাচার্যর হাত ধরেই পুরনিগমের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কাউন্সিলর হিসেবে সিপিএম থেকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হন শঙ্কর। পরে মেয়র হওয়ার পর শিলিগুড়ি পৌরনিগমের বোর্ডে মেয়র পারিষদ হিসেবে তাঁকে তুলে আনেন অশোক ভট্টাচার্য। সেখান থেকেই শিলিগুড়ির রাজনীতিতে যুবদের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন শঙ্কর ঘোষ। পৌরনিগমের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব শঙ্কর ঘোষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন খোদ অশোক ভট্টাচার্য নিজেই। কিন্তু ছন্দপতন হয় এবারের বিধানসভা নির্বাচনে। শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে অশোক ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন শঙ্কর ঘোষ। এরপরই তিনি দীর্ঘ ৩০ বছরের বাম রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে এসে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন।
গুরুকে হারিয়ে বিধায়ক হন শঙ্কর
বলা বাহুল্য ২০২১ এর বিধানসভার নির্বাচনে শিলিগুড়ি আসনে গুরু শিষ্যের লড়াই হয়। যদিও নির্বাচনের ফলাফলে শিষ্যের শংকরের কাছে পরাজিত হতে হয় অশোক ভট্টাচার্যকে । নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই শংকর ঘোষ জানিয়েছিলেন আগামী দিনে অশোক ভট্টাচার্যের কাছে পরামর্শ ও তার অভিজ্ঞতাকে নিয়ে এগোবেন তিনি । ফলে এদিনের এই সৌজন্যে সাক্ষাৎকার শংকর ঘোষ যে অশোক ভট্টাচার্যর পরামর্শ নিয়ে এখনো চলতে চাইছেন তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায় এদিন।