এসেছিলেন দলের সাংগঠনকে মজবুত করতে। আর তাঁর সফরের দ্বিতীয় দিনেই রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় বয়ে গেল। কেবল রাজ্য বলি কী করে, সেই ঝড়ের আঁচ গিয়ে লেগেছে রাজধানী দিল্লিতেও। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ট্যুইটারে বইছে সমালোচনার ঝড়। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও রয়েছেন সেই তালিকায়। বুধবার দু'দিনের রাজ্যসফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভবানীপুরে সভা করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। আর বৃহস্পতিবার গন্তব্য ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় এলাকা। কিন্তু সপার্ষদ বিজেপি সভাপতি সেখানে পৌঁছনোর আগেই বেধে গেল ধুন্ধুমারকাণ্ড। রাস্তাতেই নাড্ডা সহ বিজেপির অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের কনভয় লক্ষ্য করে চলতে থাকল ইটবৃষ্টি। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ এই হামলায় আহত হয়েছেন তাদের ছোট-বড় একাধিক নেতা। বাদ যায়নি স্বয়ং এরাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও। হাতে চোট পেয়েছেন এই বিজেপি নেতা। দলের সর্বভারতীয় সভাপতির ওপর এই হামলাকে নিয়েই এবার মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে নেমেছে গেরুয়া শিবির। যার জেরে স্বয়ং রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করে বসলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এদিন ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার পছে একাধিকবার বাধা পেয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বহু স্থানে তাঁর গাড়ি আটকানো হয়েছে। জেড প্লাস নিরাপত্তার বলয়ে থাকা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির ওপর এভাবে হামলার ঘটনায় তাই এরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই আরেকবার নিশানা করতে চাইছে পদ্ম শিবির। নাড্ডা নিজেও সেই একই পথে হেঁটেছেন। নিতান্ত দৈবক্রমে বাধা পেরিয়ে, হামলা থেকে আত্মরক্ষা করে তিনি সভাস্থলে এসেছেন, এভাবেই জনসভায় বক্তব্য শুরু করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বলেছেন ‘মা দুর্গার’ কৃপার কথা। বুলেটপ্রুফ গাড়িতে তিনি ছিলেন বলে বেঁচে গিয়েছেন। এমন দাবিও করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুকে দাঁড়িয়ে।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির ওপর বাংলার বুকে হামলার ঘটনায় ডিসেম্বরের শীতেও সুদুর প্রসারী উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজধানীতে। খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল থেকে কৃষিমন্ত্রী নেরন্দ্র সিং তোমার সবাই বাংলার আইন-শৃ্ঙলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একের পর এক ট্যুইট করেছেন। বাদ যায়নি খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও নিজেও। শাহ ট্যুইটে লেখেন, "আজ বাংলায় জেপি নাড্ডাজির ওপরে হওয়া আক্রমণ খুব নিন্দনীয়। যতই নিন্দা করা হয় ততই কম। কেন্দ্রীয় সরকার এই আক্রমণকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে। এই স্পনর্সড হিংসার জন্য বাংলার সরকারকে রাজ্যের শান্তিকামী মানুষের কাছে জবাব দিতে হবে।" আরেকটি ট্যুইটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেখেন, "তৃণমূল শাসনের অধীনে বাংলা অত্যাচার, অরাজকতা ও অন্ধকারের যুগে চলি গেয়েছে। তৃণমূলের শাসনে যেভাবে রাজনৈতিক হিংসাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরে চূড়ান্তভাবে আনা হয়েছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী সকলের জন্য তা দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।"
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার বলেন, এ জাতীয় ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে, এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতির কনভয়ে পাথর ছোড়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার এটিকে অগ্রাহ্য করছে। আমরা এই হামলার নিন্দা করি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, জেপি নাড্ডা, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র ওপর আক্রমণ দুর্ভাগ্যজনক। পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আমরা আক্রমণকারী গুন্ডাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার সকালেই নড্ডার কনভয়ে হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ , ‘‘বুধবার থেকে তৃণমূল লোক জড়ো করেছে ডায়মন্ড হারবারের যাওয়ার পথে। ওরাই হামলা চালিয়েছে।’’ নড্ডার নিরাপত্তার গাফিলতির অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দেন তিনি। যার অব্যবহিত পরে রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেন শাহ।
চলতি সপ্তাহেই বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান ঘিরে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। দলীয় কর্মী উলেন রায়ের মৃত্যুর জন্য পুলিশ-প্রশাসনের দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে গেরুয়া শিবির। যা নিয়ে এখন রাজ্যের সঙ্গে চরম বিতণ্ডা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। দলীয় কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় এরাজ্যের আইন-শৃ্ঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রপতি শাসনের দরবার করে চলেছে বিজেপি। এবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতির কনভয়ে হামলার পর সেই দাবি আরও জোরালো হল গেরুয়া শিবিরের।