যদি অমিত শাহর কথা ধরে নিয়ে এগোতে হয়, তাহলে বলা যায় পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে ভূমিপুত্র-ই খুঁজছে পদ্মশিবির। এরই মধ্যে ৭ মার্চ যেন সেই ভূমিপুত্রেরই সন্ধান পেল বিজেপি। বর্ষীয়ান অভিনেতা ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তী। যদিও তিনবার জাতীয় পুরস্কারেরর অধিকারী এবং বাংলা থেকে বলিউডে পাড়ি দেওয়া এই অভিনেতা এখনও পদ্মফুলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিন ব্রিগেডে, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য এক সভায় বিজেপিতে যোগ দিলেন মিঠুন। এক ঘণ্টার লম্বা বক্তৃতায় মোদী, মিঠুনকে একপ্রকার বাংলার ভূমিপুত্র বলেই ইঙ্গিত করলেন। বললেন, রাজ্যে তিনিই আসল পরিবর্তন আনবে। তবে মিঠুন চক্রবর্তীর নামে ভিড় ফেটে পড়েছিল। অল্পবয়সী সমর্থকেরা তাদের তারকার এক ঝলক পাওয়ার জন্য সমস্ত ব্যারিকেড ভাঙার উপক্রম করেছিল। ভিআইপি রুমে ঢুকে পড়ার চেষ্টাও করেছেন অনেকে। অন্যদিকে, বছর ৭০-এর অভিনেতাকে এদিন দেখা গেল বাঙালি ধুতি-পাঞ্জাবি ও কালো উলের টুপিতে।
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন ও বর্তমান বিসিসিআই প্রধান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে গেরুয়া শিবিরে নিয়ে আসার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু সৌরভ পষ্ট জানিয়ে দেন যে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চান এবং শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীর ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণটিও এড়িয়ে যান। সুতরাং তাঁর জায়গায় মিঠুনই একমাত্র মুখ! সাধারণ দেখতে এক ছেলে যে ১৯৭০-এর দশকে মুম্বই চলে এসেছিলেন এবং তারপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সম্প্রতি, বহু সিনেমা ও টেলিভিশন তারকারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে- যশ দাশগুপ্ত, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, হিরণ চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, সৌমিলি বিশ্বাস, পাপিয়া অধিকারী। এমনকী প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুর্পণা সেনগুপ্তর মতো অভিনেতাদেরও দলে টানার চেষ্টা করেছে বিজেপি শিবির। সেই দিকে তাকিয়ে দেখতে গেলে মিঠুন চক্রবর্তীই এখনও পর্যন্ত বিজেপির সবথেকে বড় তাস।
মিঠুন চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বহিরাগত' তত্ত্ব কিন্তু খাটবে না। অভিনেতার যে জনপ্রিয়তা এখনও বাংলায় যথেষ্ট। মমতার দিকে সরাসরি আক্রমণ না শানালেও মিঠুনের বক্তব্যে নিশানা ছিল চাঁচাছোলা। বহিরাগত আক্রমণের প্রেক্ষিতে মিঠুন বলেন, "'আজ আমার কাছে স্বপ্নের মতো। জোড়াবাগানে যেখানে থাকতাম,সেটা একটা অন্ধকার গলি ছিল। সেখানে সেদিন একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, জীবনে কিছু একটা করব। কিন্তু, এই স্বপ্ন দেখিনি যে বিশ্বের সবথেকে বড় গণতন্ত্রের বড় নেতা মোদীজি এই মঞ্চে আসবেন, আর আমি সেখানে থাকব। এটা স্বপ্ন নয় তো কী! অন্ধকার লেনে জন্মানো একটা ছেলে এখানে এসেছে। আরপকটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, তখন বয়স ১৮। গরিবদের জন্য কিছু করব। আজ মনে হচ্ছে, সেই স্বপ্নটা দেখতে পাচ্ছি। এটা হবেই। স্বপ্ন শুধু তো দেখার জন্য নয়, সফল হওয়ার জন্য। স্বপ্ন সফল করার উদাহরণ আমি। আমি গর্বিত বাঙালি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, রানি রাসমণি, বিদ্যাসাগর এঁরাই বাঙালি। বাংলায় বসবাসকারী সকলেই বাঙালি।'
২০১৪ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন প্রয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর ‘ঘনিষ্ঠ’ মিঠুন। তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সদস্যও হয়েছিলেন। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যায় তাঁর নাম। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে চিঠি লিখে টাকা ফেরত দেন তিনি। তার পর থেকে তাঁকে আর বিশেষ লোকসমক্ষেও দেখা যায়নি। সেই সময় কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল তৃণমূলও।
যদিও সৌগত রায় জানান যে একসময়ের নকশালদের সঙ্গে যুক্ত থাকা মিঠুন চক্রবর্তী এখন বিজেপিতে গিয়েছেন কিন্তু অভিনেতা কোনওদিনই বাংলার জন্য কিছু করেননি।তৃণমূলের বর্ষীয়াণ নেতার কথায়, সকলেই বাংলাকে নিয়ে অনেক কিছু বলেন। মিঠুন কোন কাজটা করছে বাংলার জন্য? উনি তো মুম্বাইয়ে থাকেন, সেখানে অভিনয় করেন। তাঁর থেকে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কিছু ভাবা বা বলা আশা করা যায় না। উনি নকশাল আন্দোলন দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন আর শেষ করলেন বিজেপিতে যোগ দিয়ে।
বিজেপির অবশ্য মত মিঠুনকে নিয়ে এবার আর বহিরাগত তত্ত্ব দাঁড় করাতে পারবে না তৃণমূল শিবির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতা বলেন, আমাদের সঙ্গে মিঠুনদা রয়েছেন। যিনি বাংলার একজন সফল পুত্র যিনি রাজ্য ও দেশকে গর্বিত করেছেন।"